দি ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি)কর্তৃক ব্যাংকারদের পদোন্নতির পেশাদারী পরীক্ষা প্রতিবছর ২ (দুই) বার অনুষ্ঠিত হয়। এতদিন ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা সকল ব্যাংকের জন্য বাধ্যতামূলক ছিলনা। পদোন্নীতির ক্ষেত্রে কোন ব্যাংক ডিপ্লোমার নম্বর বাধ্যতামূলক আবার কোন ব্যাংকে ঐচ্ছিক ছিল। এটা ছিল ব্যাংগুলোর একান্তই নিজস্ব এখতিয়ার। কিন্তু গত বছর অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপন জারী করে দেশের সরকারি-বেসরকারী সকল ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্যই দুই পর্বের ব্যাংকিং ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট মৌলিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ব্যাংকারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তাছাড়া ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা ব্যাংকিং সংক্রান্ত জ্ঞান লাভের পাশাপাশি ব্যাংক কর্মকর্তাদের পেশাগত উত্কর্ষ অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, অফিসার ও সমমানের পদ হতে মহাব্যবস্থাপক ও সমমানের (প্রধান নির্বাহীর অব্যবহিত নিচের এক স্তর ব্যতীত অন্য সব কর্মকর্তা, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন) পদ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত মোট নম্বরের মধ্যে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, ১ম পর্ব (জেএআইবিবি) ও ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, ২য় পর্ব (ডিএআইবিবি) পরীক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ রাখতে হবে। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, দ্বিতীয় পর্ব পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত নম্বর কোনোভাবেই প্রথম পর্বের জন্য নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে কম হতে পারবে না।
এসব শর্ত টেকনিক্যাল পদ (আইটি কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইন কর্মকর্তা ইত্যাদি) এবং ক্যাশে কর্মরত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে শিথিল করা যাবে এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
৯১তম ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা গত জুন,২০২০ এ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তা স্থগিত করা হয়। পুনরায় পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে হত ২৭ নভেম্বর প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিনদিন ব্যাপী এ পরীক্ষার দুদিনের পরীক্ষা ৪ ও ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ৪ ও ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষনা করা হয়নি।
নভেম্বরে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এ সময়ে গণজমায়েত না করার জন্য বারবার পরামর্শ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশও ব্যাংক সহ অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন থেকে বিরত থাকছে। সেখানে আইবিবি বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিচার বিশ্লেষন না করে ঘটা করে পরীক্ষার আয়োজন এবং হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও অনীহা দেখা যায়। আইবিবি-র মত একটি স্বনামধন্য ও দায়িত্বশীল পেশাদার গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের পদেক্ষেপ ব্যাংকারদেরকে হতাশ করেছে এমনকি তাদের পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জুনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে যেসব ব্যাংক কর্মকর্তাদের ডিপ্লোমা সনদ নাই তারা বিপাকে পড়েছেন। অনেক কর্মকর্তা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কারণ প্রতিবছর ডিসেম্বর/জানুয়ারী মাসে বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়। গত বছর জুনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারার কারণে অনেক ব্যাংকার পদোন্নতির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা সনদের নির্ধারিত নম্বর কম পাবেন। এর ফলে তারা পদোন্নতির ক্ষেত্রে বঞ্চিত হতে পারেন।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালীন সময়ে কোমলমতী স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও দেশের সরকারী/বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পেশাদারী প্রতিষ্ঠানের সেমিস্টার পরীক্ষা বন্ধ হয়নি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সনামন্য স্নাতকোত্তর মানের অথবা এধরনের উচ্চতর পেশাদারী ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)ও পরীক্ষা বন্ধ রাখেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও করোনাকালীন সময়ে উচ্চতর পেশাজীবী ডিগ্রি/পোস্টগ্রাজুয়েট/ডিপ্লোমা/পিএইচডি পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে। বিশষজ্ঞরা মনে করেন, বিআইবিএম, আইবিবি ছাড়াও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্শ্বিবিদ্যালয় ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে বাংলাদেশে ব্যাংকারদের জন্য অনলাইনে পরীক্ষার আয়োজন করতে পারত। বিশ্বব্যাপী করোকালীন সময়ে বিশেষ করে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও অনলাইন ভিত্তিক পাঠদান,পরীক্ষার আয়োজন ও পরীক্ষা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন অব্যাহত রাখা হচ্ছে। কারণ করোনাকালী সময় দীর্ঘ হচ্ছে। দেশ কখন করোনামুক্ত হবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত। তাই করোনাকে সাথে নিয়েই বিকল্প পদ্ধতি সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখা হচ্ছে।
আইবিবি প্রত্যেক পরীক্ষার পূর্বে পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোচিংয়ের আয়োজন করে থাকে। ফলে পরীক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উপকৃত হন। বর্তমানে যেহেতু ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেহেতু কোচিং কার্যক্রম আরো জোরদার করা উচিত। আবার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একট বিরাট অংশ নন কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের। তাই ব্যাংকাররা মনে করেন,পরবর্তী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আইবিবি-র উদ্যোগে অনলাইন কোচিং অব্যাহত রাখতে পারে ফলে অনেক পরীক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন।
দি ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্সকেও বৈশ্বির পরিস্থিতি গভীরভাবে বিশ্লেষন করে সময় ও পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয় এগিয়ে যেতে হবে। ৯১তম ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার বাকী বিষয়ের পরীক্ষা কখন এবং কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে তা সে সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রকাশ করা সেসাথে কোচিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এটাই ব্যাংকারদের প্রত্যাশা।