আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মে) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত না হলেও পোশাক শিল্প এলাকায় ব্যাংক খোলা থাকবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বুধবার যদি চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার স্বার্থে শুধু শিল্প এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের শাখা খোলা থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ঈদের আগে তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন, বোনাস ও অন্যান্য ভাতা পরিশোধের সুবিধার্থে এবং রফতানি বাণিজ্য অব্যাহত রাখার স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ব্যাংক খোলা থাকবে। এলাকগুলো হলো, ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত পোশাকশিল্প এলাকার তফসিলি ব্যাংকের পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে নিশ্চিত করে খোলা থাকবে।
বুধবার (১২ মে) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। সভায় ঘোষনা করা হয়, বাংলাদেশের আকাশে বুধবার পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে এবার পুরো ৩০ রোজা হচ্ছে এবং শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তাই আজ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট এলাকার তফসিলি ব্যাংকের শাখাগুলো ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো খোলা থাকবে।
ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আজ ১৩ মে তাদের ৩৫টি শাখায় লেনদেন করা হবে যার মধ্যে অধিকাংশই এডি শাখা এবং প্রায় সব শাখা ঢাকা শহর কেন্দ্রীক, কয়েকটি চট্রগ্রাম ও নারায়নগঞ্জ শহর কেন্দ্রীক। অল্প কয়টি ব্যাংক শিল্প এলাকায় অবস্থিত। এর কারণ গ্রাহকের ফ্যাক্টরি আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা এলাকায় অবস্থিত হলেও তারা মূলত ব্যাংকিং করেন শহরের মধ্যে অবস্থিত বড় শাখাগুলোতে।
বর্তমানে অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংকগুলোর আমদানি রফাতানি কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে (সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টার) সিপিসি এর মাধ্যমে যা প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত। আবার প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোও শহরের মধ্যে অবস্থিত । ফলে ব্যাংকগুলোর ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ আজ অফিসে এসেছেন।
ঈদের ঠিক আগের দিন ব্যাংক খোলা রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যাংকার। চীন সহ বিশ্বের অনেক দেশে বড় উৎসবের সময় ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ব্যাংক সহ অন্যান্য অফিস বন্ধ রাখা হয়। ব্যাংকগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে আজকাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই গ্রাহক প্রায় সব লেনদেন করতে পারছেন। তাই উৎসবের মধ্যে দীর্ঘ দিন ব্যাংক বন্ধ হলেও সমস্যা হয়না। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোও গ্রাহক সেবায় প্রযুক্তিতে অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। প্রায় সকল আর্থিক লেনদেন এখন ঘরে বসেই সম্পন্ন করা সম্ভব।
সম্প্রতিক বছরগুলোতে শিল্প এলাকার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের দোহাই দিয়ে ঈদের আগের দিন ব্যাংক খোলা রাখার রেওয়াজ চালু হয়েছে। ফলে ঈদ উদযাপনে ব্যাংকাদের পরিবারে মারাত্নক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ব্যাংকার তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ কৌতুক অথবা ক্ষভের সাথে লিখেছেন “ঈদের দিন সিনিয়রদের কাছ থেকে পাওয়া সেলামির টাকা জমা দেয়ার সুযোগ দিতে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখা যেতে পারে”। অনেকে বলছেন, “ঈদের দিনেও সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে দোকান এবং বিপনি বিতানে বিশাল একটি অংকের অর্থের লেনদেন হয় তারা টাকা পয়সা কোথায় রাখবেন, তাই ঈদের দিনেও ব্যাংক খোলা রাখা হউক” ইত্যাদি।
ঈদের বন্ধের দুদিন আগে ব্যাংকগুলোতে ঠাসা ভিড় লক্ষ করা গেল। আর গ্রাহকের অধিকাংশই ইউটিলিটি বিল জমা দেয়ার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাককে গেখা গেছে। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ব সহ বেসরকারী প্রায় সব ব্যাংকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল জমা দেয়া যায় । তাছাড়া মুঠোফোনের মাধ্যমে বিকাশ, রকেট সহ অন্যান্য এ্যপসের মাধ্যমেও বিল জমা দেয়া যায়। অথচ অধিকাংশ গ্রাহকই এসব প্রযুক্তি ব্যবহার না করে ব্যাংকে ভিড় জমান। এর কারণ হিসাবে ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রাহকদের একটি বড় অংশ ফেসবুক ও অন্যান্য এ্যপস ব্যবহারে পারদর্শী হলেও ব্যাংকিং প্রযুক্তি ব্যবহার ঝামেলা মনে করেন, অনেকে আবার প্রযুক্তির উপর আস্থা রাখতে পারেননা।
দেশের অর্থনীতি সচল রাখার প্রয়োজনে অর্থনীতির যোদ্ধা হিসাবে খ্যাত ব্যাংকাররা বিভিন্ন দুর্যোগ এবং করোনা মাহামারী সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু ঠিক ঈদের আগের দিন ব্যাংক খোলা রাখায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকার ও পরিবারের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে মনে করেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। তাই ভবিষ্যতে ঈদের আগের দিন ব্যাংক বন্ধ রাখা যায় কিনা বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি।
যাদের জন্য ঈদের আগের দিন ব্যাংক খোলা থাকল সেই গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান ঈদের পরে ১০ দিন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। ঈদের পর প্রায় সব শিল্প প্রতিষ্ঠানই বন্ধ থাকবে তাই ১৬ মে ব্যাংকগুলোতে তেমন লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা নাই। বিগত ঈদ পরবর্তী দু এক দিনের অভিজ্ঞতাতেও দেখা যায় অধিকাংশ ব্যাংকগুলো ফাঁকা থাকে। তাই যেসব কর্মকর্তারা ১৩ তারিখের ছুটি যা ভোগ করতে পারেন নাই তাদেরকে ১৬ মে ঈদ সাধারণ বন্ধের আওতায় ছুটি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।