- ব্যাংক কর্মীদের ঝুঁকি ভাতা বা ঝুঁকি নিরসনের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ নাই।
- যানহাবন বন্ধ থাকলেও যাতায়াতের ব্যবস্থা নাই।
গত বছরের মার্চ এপ্রিল মাস লকডাউনে নাকাল ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের মানুষও। এর ভয়াবহ দুঃসময় পার করেছে এদেশের মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয়ের খেঁটে খাওয়া শ্রমজীবী কোটি কোটি মানুষ।মহামারীর ভয়াল থাবায় ঝড়ে যায় অসংখ্য তাজা প্রাণ।
ডাক্তরার, নার্স, পুলিশ, ব্যাংকার সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অকালে পৃথিবীতে থেকে চলে গেলেন। অর্থনীতির সম্মুখসাররি যোদ্ধা অসংখ্য ব্যাংকার প্রাণ হারালেন। সরকার ঘোষিত লকডাউনে সমস্ত সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যেখানে বন্ধ রাখা হল সেখানে খোলা ছিল শুধুমাত্র ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সীমিত সময়ের জন্য ব্যাংক খোলা রাখার কথা বলা হলে বাস্তবে সিমীত সময়ে অসীম ব্যাংকিং কার্যক্রম করতে হয়েছে। প্রতিদিন ব্যাংকে গ্রাহকের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে।ফলে এক একটি ব্যাংক শাখা পরিণত হয় ’করোনার হাব’ বা করোনার উৎস কেন্দ্র হিসাবে।
প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংকারের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হয়েছে। ঠিক কত সংখ্যক ব্যাংকার মৃত্যু বরণ করেছেন তা বাংলাদেশ ব্যাংক বা কোন সংস্থা প্রকাশ করেনি। তবে বিভিন্ন গণ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা যায় শতাধিক ব্যাংকার করোনায় মৃত্যু বরণ করেছেন। শুধুমাত্র এ বছর মার্চের শেষ দিক থেকে আজ পর্যন্ত অন্ততঃ ১৫-২০ জন ব্যাংকরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়েছেন কতজন তার কোন পরিসংখ্যান নেই।
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ মোকাবিলায় আগামী ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। পরবর্তীতে তা ১৩ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওই বিধিনিষেধ অনুযায়ী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খোলা ছিল। অন্যদিকে ১২ এপ্রিল হতে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
সরকার ১২ এপ্রিল আবারো ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের ঘোষনা দেয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ কর্ম এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর ও সংশ্লিষ্ট অফিস এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।এছাড়া, এই বিধিনিষেধের আওতায় পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকও সিদ্ধান্ত জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এ সময় ব্যাংক শাখার পাশাপাশি আর্থিক সেবা দেওয়া ব্যাংকের সকল উপ-শাখা, বুথ ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাও বন্ধ থাকবে। তবে সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এটিএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ অনলাইন সব সেবা।
মজার বিষয় হল, শেষ পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারলনা বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের এক দিন পরে,১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার আবার বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সম্ভবত এক দিন পরে তারা বাস্তবতা অনুধাবন করতে পেরেছে। সুতরাং খোলা থাকবে ব্যাংক। তাহলে আজ দীর্ঘ সময় ধরে লাইন দিয়ে অসংখ্য মানুষ ব্যাংকের লেনদেন করল, তাদের সময়ের দামের কী হবে? এসব কারণেই ২০২১ সালের লকডাউনের আলোচিত চরিত্র হচ্ছে ব্যাংক বা ব্যাংকার।বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সচল থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে রমজান উপলক্ষ্যে ব্যাংকিং লেনদেন শুরু হবে সকাল ১০টায়। দুপুর ১টায় লেনদেন শেষ হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়ই একা বসে ব্যাংক বন্ধের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকারের অর্থমন্ত্রণালয় সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করেই এ ধরসের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। কারণ করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সব কিছু বন্ধ রেখেই নিয়ন্ত্রন করতে হবে। মনে হচ্ছে ব্যাংক খোলা নিয়ে তুঘলকি কান্ড করা হচ্ছে!
দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৫-১৩৫১) ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত চরিত্র। বাংলায় ‘তুঘলকি কাণ্ড’ নামে যে বাগধারাটি রয়েছে, তার উৎপত্তি এই মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আজব কাণ্ডকারখানা থেকেই। দেশের মানুষ নিশ্চয়ই বাগধারাটি এবার ভালোভাবে বুঝতে পারছেন।
ব্যাংক খোলা থাকবে তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে ব্যাংক কর্মীদের ঝুঁকি ভাতা বা ঝুঁকি নিরসনের বড় ধরনের কোন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেনি। সর্বাত্নক বন্ধ থাখায় নিশ্চয়ই সকল প্রকার যানহাবনও বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশের সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ তখন ব্যাংক কর্মীরা বন্ধের দিন অফিস করতে বাধ্য থাকবে। অথচ ঝুঁকি নিয়ে ছুটির দিন অফিস করলেও ব্যাংকারদের আর্থিকভাবে প্রণোদিত করার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেনি।
বিগত দিনের লকডাউনের অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করা যায়, ব্যাংকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে ব্যাংকারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ব্যাংক কর্মীরা ব্যাপকহারে আক্রান্ত হলে তার দায় কে নেবে? তাদের পরিবার পরিজনদের মধ্যেও উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশে ব্যাংক কর্মীরা বলছেন তারা কি হঠাৎই করোনাজয়ী হয়ে গেলেন?
ব্যাংকার বলছেন, দেশের বৃহত্তর অর্থনীতির স্বার্থে সাধারন ছুটির আওতায় ব্যাংকিং করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারদের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরীঃ
- ঝুঁকি ভাতা/প্রণোদনা প্রদান।
- বিশষ বীমা ব্যবস্থা চালু
- বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা
- অসুস্থ হলে সম্পূর্ণ ব্যাংকের খরচে এবং ব্যাংকারদের জন্য নির্দ্দিষ্ট হাসপাতালে পৃথক উইনিটে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংকারদের ঝুঁকির বিষয়টি যথাযথভাবে উপলব্ধি করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।