গত বছরে মার্চ থেকে করোনা মহামারীর প্রাদুর্বাব শুরু হওয়ার পর সারাদেশে লকডাউন, আফিস আদালত ও যানবাহন বন্ধ ঘোষনা করো হলেও কেবল খোলা ছিল হাসপাতাল, আইন শৃঙ্খলা রাক্ষাবাহিনীর অফিস ও ব্যাংক। করোনা নিয়ন্ত্রনের মাঠে সম্মুখ সারির দায়িত্বে ছিলেন ডাক্তার, নার্স ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যবৃন্দ। আর অর্থনীতির মাঠে সম্মুখ সারির দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংকাররা।
গত বছরের সময়টি ছিল বাংলাদেশ সহ পৃথিবী ব্যাপি এক বিভিশীকাময় সময়। কারণ বিশ্ব এ ধরনের মহামারীর জন্য কোন প্রস্তুত ছিলনা। চিকিৎসা কী হবে সে বিষয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ধারনারও অভাব ছিল। তাছাড়া, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণ ও ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষা সামগ্রী সবই ছিল অপ্রতুল, এক কথায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বাংলাদেশের ডাক্তার-নার্সদেরও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই চিকিৎসা দিতে হয়েছিল। ফলে অনেক ডাক্তার চিকিৎসা না দিয়ে আত্ন গোপনে চলে গিয়েছেলেন। সে সময় প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ ও ব্যাংকারদের মৃত্যুর খবরে আকাশ বাতাস ভারী হত।
গত বছরের জুন-জুলাইয়ের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে। বিশষজ্ঞরা আশংকা করেছিলেন নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া শীতে দেশে করোনার তীব্রতা বাড়তে পারে। কিন্তু শীতকালে এদেশে করোনাকে কিছুটা শান্ত থাকতেই দেখা গেল। কিন্তু শীত চলে যাওয়ার পর মার্চে গরম শুরু হওয়ার সাথে সাথে আবার করোনার সেই ভয়াল ফিরে আসতে শুরু কর। মার্চের শেষের দিকে করোনার বিষ দাঁতের ছোল বসাতে শুরু করল পুর্ণ মাত্রায়। আবারও প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
এবারের মৃত্যুর মধ্যে একটিা বিষয় লক্ষনীয় তা হল এখন পর্যন্ত ডাক্তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক সংবাদ। অনেকেই মনে করছেন, এবারে ডাক্তারদেরকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী সরবরা করা সম্ভব হয়েছে। ফলে তাদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার হয়তা কম। অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও মৃত্যুর খবর তেমন প্রচারিত হচ্ছেনা।আমরা মনে করি করোনা নিয়ন্ত্রন ও এর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার-নার্সদেরকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
এ বছর করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথেই অর্থনীতির সম্মুখ সারির যোদ্ধা ব্যাংকারদের করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর বেশী পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই তরুণ, যুবক ও মধ্যবয়সী সহ বিভিন্ন বয়সী ব্যাংকারদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং ব্যাংকারদের লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।
ব্যাংকে সীমিত ব্যাংকিং সেবা দেয়ার কথা থাকলেও বাস্ততে সীমিত সময়ে সব ধরনের সেবাই দিতে হচ্ছে ব্যাংকারদেরকে । অনেক ব্যাংকার কৌতুক করে বলছেন ”সীমিত সময়ে অসীম ব্যাংকিং” সেবা দিতে হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যাংকের ভেতরে ঠাসাঠাসি ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকারদের নেই প্রয়োজনী সুরক্ষা সামগ্রী। এ যেন ’ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’। ফলে শুধুমাত্র ব্যাংকাররা নয় সেবা নিতে আশা গ্রাহকরাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
অনেকে বলছেন, মার্চ মাসের শেষের দিকে লকডাউন ঘোষনা করা হল। অথচ মার্চের প্রথম অথবা মাঝামাঝি দিকে করোনা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি।মার্চের প্রথম দিক থেকেই সরকার যদি অধিক সতর্ক হতো তাহলে রমজাম ও ঈদকে সামনে রেখে মানুষকে এত ভোগান্তিতে পড়তে হতোনা।
করোনায় ঠিক কতজন ব্যাংক মৃত্যুবরণ করেছেন তার সঠিক তথ্য জানা নেই। বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরবরাহকৃত মৃত্যুবরণকারী কয়েকজন ব্যাংকারের নাম নীচে দেয়া হলঃ
১) সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের জনাব মুজতবা শাহরিয়ার।
২) সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) জনাব মাহবুব এলাহী।
৩)রূপালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জনাব সহিদুল ইসলাম খান।
৪) উত্তরা ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার কর্মকর্তা জনাব ওয়াহিদ মর্তুজা।
৫) সিটি ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব আবু সাঈদ।
৬) এনসিসি ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট(এভিপি) জনাব জামশেদ হায়দার চৌধুরী।
৭) জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের অ্যাডমিন শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার জনাব হাসিবুর রহমান।
৮) জনাব আবুল বাসার স্যার SAVP ন্যাশনাল ব্যাংক লি: দিলকুশা শাখা, ঢাকা।
৯)মোঃমনিরুজ্জামান,ক্যাশ অফিসার, ডাচ বাংলা ব্যাংক ইমামগঞ্জ শাখা।
১০)জনাব আশরাফ আলী,বাংলাদেশ ব্যাংক (মতিঝিল), জয়েন ম্যানেজার (ক্যাশ বিভাগ)
১১) জনাব ওয়াহিদ উল্ল্যাহ,কর্মকর্তা,NCC ব্যাংক,দক্ষিন খান শাখা।
১২)মুজতবা শাহরিয়ার রনি, ফাস্ট হিউম্যান রিসোর্স, সিনিয়র অপারেশন ম্যানেজার, সিটি ব্যাংক লিমিটেড।
১৩) আবদুল মালেক, অফিসার, তেজগা শাখা, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।
১৪)জনাব মিজানুর রহমান, অফিসার, ফকিরাপুল শাখা, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।
১৫)কৃষি ব্যাংক আলীকদম শাখার কর্মকর্তা আমিরুল আজিজ।
১৬) মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট জি এইচ এম জাহিদুর রহমান।
১৭)জনাব মেজবাউল হক আরমান,এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড, লোহাগড়া শাখা চট্টগ্রাম।
১৮) জনাব আবু হানিফ আকন্দ ,সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, নিউটন শাখা, পটুয়াখালি, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।
১৯) জনাব এ এইচ এম সিদ্দিক,কর্মকর্তা, অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন, ডিভিশন-২, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
২০) জনাব গিয়াস উদ্দীন, ম্যানেজার, কক্সবাজার শাখা, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড।
২১) মোঃআতিকুর রহমান, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, লোকাল অফিস, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
২২) জনাব আবুল হোসেন, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার,গাজীপুর, কাপাসিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।
২৩) জনাব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, পরিচালক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।
২৪)জনাব মোঃআব্দুস সবুর, এজিএম,আগারগাঁও শাখা, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
২৫) জনাব সলিমুল্লাহ ডিজিএম (অবঃ), সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
২৬) সোনালী ব্যাংকের বাউফল শাখা, পটুয়াখালির এক জেষ্ঠ কর্মকর্তা,
২৭)বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ন পরিচালক ফরিদ উদ্দীন সোয়াদ।
২৮) এক্সিম ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার তানভীর আহমেদ তুষার।
২৯)ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড এর বন্দর টিলা শাখার কর্মকর্তা আবু রায়হান।
৩০)ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর যশোর জোন,চুয়াডাঙ্গা শাখার এমসিজি সোলায়মান আলী করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেছেন।
৩১) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের গাজীপুর শ্রীপুর শাখার সিনিয়র অফিসার আবুল কাশেমের মৃত্যু বরন করেছেন।
৩২) জনাব আবু বকর সিদ্দিক,অফিসার, শরীয়তপুর শাখা, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।
৩৩)একে এম শাজাহান আলী, সিনিয়র অফিসার, বগুড়া কর্পোরেট শাখা, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।
৩৪) মোঃআব্দুর রহমান,অফিসার, সিসি ডিভিশন সেকশন,অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান শাখা।
৩৫)জনাব আল্লাহ মালিক কাজেমি, চেইঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংক।
৩৬)মোহাম্মদ সেলিম (বেসরকারী মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ভাইস চেয়ারম্যান।
৩৭) জনাব চৌধুরী নুরুল হক,অফিসার, বিবি এভিনিউ কর্পোরেট শাখা, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
৩৮)মুখলেছুর রহমান মামুন, ক্যাশ অফিসার এবং ইনচার্জ, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড
৩৯)আইবিবিএল ময়মনসিংহ জোনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মোঃ জালাল উদ্দিন।
৪০) মোঃ জসিম উদ্দীন আহমেদ,ফার্স্ট এসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, কার্ড ডিভিশন, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড।
৪১) মরহুম জনাব মোঃ ঈসা (AVP) কুমিল্লা জোনাল অফিস, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
৪২) জনাব আঃমান্নান সিঃঅফিসার সিরাজগঞ্জ(রাকাব)
৪৩)জনাব উৎপল চন্দ্র এস পি ও, পাবনা (রাকাব)
৪৪) অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এর সাবেক মহাব্যবস্থাপক জনাব এবিএম খালেকুজ্জামান।।
৪৫) এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড এর নরসিংদী মাধবদী শাখার সহকারী ক্যাশ অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
৪৬) রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, হুজুরীপাড়া(রাজশাহী জোন) শাখার ম্যানেজার জনাব মোঃএখলাসুর রহমান (প্রিন্সিপাল অফিসার)।
৪৭) জনাব মোঃ সাইফুদ্দীন, এক্সিকিউটিভ অফিসার, এন সি সি ব্যাংক লিমিটেড, প্রগতি সরণি শাখা।
৪৮) জনাব মোঃমুজিবুর রহমান, কর্মকর্তা, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড।
৪৯)মোঃ আনিছুল হক(জনতা ব্যাংক লিমিটেড, সিনিয়র অফিসার, সপ্তপদী মার্কেট শাখা)
৫০)ইসলামী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার সিকিউরিটি গার্ড গোলাম মোস্তফা।
৫১) জনাব মোঃরিদওয়ানুল হক,সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, খাতুনগঞ্জ শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
৫২) মোঃ কাজী সাহেদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার, এবি ব্যাংক লিমিটেড। ঝিকরগাছা ব্রাঞ্চ, যশোর।
৫৩)সমবায় ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী মোঃ আফজাল হোসেন নিছার।
৫৪) এবিএম নোমান,সোনালী ব্যাংক, তমরুদ্দীন শাখার ক্যাশ অফিসার।
৫৫)সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ও শাখা প্রধান মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া ( হাসনাবাদ শাখা, দক্ষিন কেরানিগঞ্জ)।
৫৬)রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ঠাকুরগাঁও জোনের যাদুরাণী হাট শাখার ব্যবস্থাপক (মু:ক:) জনাব মোঃ ইসাহাক আলী।
৫৭)বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী এর যুগ্ন ব্যবস্থাপক (ক্যাশ বিভাগ) জনাব লুৎফর রহমান।
৫৮) শফিকুল ইসলাম কনক, ন্যাশনাল ব্যাংক, নাটোর শাখা।
৫৯) আতিয়া খানম, মিরপুর শাখা, সিটি ব্যাংক লিমিটেড।
৬০) আব্দুর রাজ্জাক, প্রিন্সিপাল অফিসার, হেড অফিস, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
৬১) মোঃ আবু তাহের, সিনিয়র অফিসার, সোনালী ব্যাংক ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট।
৬২) মহিবুল্লাহ বাহার, প্রিন্সিপাল অফিসার, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।
হয়তবা আরো অনেক ব্যাংকার ভাই-বোনেরা করোনাযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের নাম না জানা থাকায় এ তালিকায় যুক্ত করা সম্ভব হলনা । করোনাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেক সম্মানীত ব্যাংকারদের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি। সেসাথে আমরা প্রত্যাশা ও দোয়া করি যাতে আর একজন ব্যাংকারও নতুনভাবে এ তালিকায় যুক্ত না হন।