মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিবেচনায় বাংলাদেশ ২০২৫ সাল নাগাদ সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক ও হংকংয়ের মতো উন্নত অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫১৬ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বা ৫১ হাজার ৬২৪ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
সংস্থাটির গত মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয়ে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে।
আইএমএফ বলছে, ২০২৫ সালে সিঙ্গাপুরের জিডিপি ৪৬১ দশমিক ৫১ বিলিয়ন বা ৪৬ হাজার ১৫১ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
একই সময়ে ডেনমার্কের অর্থনীতি ৪৮৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন বা ৪৮ হাজার ৪৪৮ কোটি ডলার এবং হংকংয়ের ৪৫২ দশমিক ১০ বিলিয়ন বা ৪৫ হাজার ২১০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সাল নাগাদ ৫০০ বিলিয়ন ডলার প্লাস অর্থনীতি নিয়ে ইউরোপের নরওয়ে (৪৯৭.৫৫ বিলিয়ন), এশিয়ার ফিলিপাইন (৫০৬.৬৬ বিলিয়ন) এবং এমনকি খনিজ তেল সমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (৪৮০.০৩ বিলিয়ন) চেয়ে বড় হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৩৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের ৩২৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।
আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে চলতি মূল্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ১৩৮ দশমিক ৭৯৪ ডলার। ভারতের হবে ২ হাজার ১১৬ দশমিক ৪৪৪ ডলার।
ফলে পরপর দুই বছর ভারতকে ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ। ভারতে চলতি বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ আর বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ভারতের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গত বছর ভারতের অর্থনীতি বেশি মাত্রায় সংকোচন হওয়ার কারণেই আবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে।
এক বছর আগে আইএমএফ জানিয়েছিল, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, আর ভারতের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকোচন হবে।
ফলে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার ও ভারতের হবে ১ হাজার ৮৮৭ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশ গতবার ঠিক এক ডলারে এগিয়ে ছিল।
তবে আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ফলে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হয় ১ হাজার ৯৬১ দশমিক ৬১৪ ডলার এবং ভারতের ১ হাজার ৯২৯ দশমিক ৬৭৭ ডলার। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেশি হয়েছিল ৩১ দশমিক ৯৩৭ ডলার।
মূলত এবার রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা বলা হলেও গত বছরের উচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির প্রভাবেই ভারত এখনো পিছিয়ে আছে। এমনকি আগামী বছরও ভারত পিছিয়ে থাকবে বলে মনে করে আইএমএফ। এ বছরের পূর্বাভাসে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেশি হবে ২২ দশমিক ৩৫ ডলার।
বর্তমানে বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার হিসাবে ২০২৫ সাল নাগাদ মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ২ হাজার ৯৯৪ দশমিক ৪৬ ডলার। সে তুলনায় নরওয়ে ও ডেনমার্কের মাথাপিছু জিডিপি হবে অনেক বেশি, যথাক্রমে ৮৯ হাজার ৬৭৯ দশমিক ৮৪ ও ৮১ হাজার ৯৫০ দশমিক ১৮ ডলার। একই সময় সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের মাথাপিছু জিডিপি হবে যথাক্রমে ৭৯ হাজার ১৬৯ দশমিক ৪৯ ও ৫৯ হাজার ১২৬ দশমিক ৮৫ ডলার।
টানা দুই বছর মাথাপিছু জিডিপি ভারতকে পেছনে ফেলা বা জিডিপিতে ২০২৫ সালে সিঙ্গাপুরকে ছাড়াবে বাংলাদেশ-আইএমএফের এমন তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ক্রয় ক্ষমতা একেক দেশে একেক রকম। উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক ডলারে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা কেনা যায়, সেটা কিনতে বাংলাদেশে ৩৩ টাকা খরচ করতে হয়।
আবার ভারতীয় মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা বাংলাদেশি মুদ্রার চেয়ে অনেক বেশি। সিঙ্গাপুরের চিত্রও একই। সুতরাং এই তুলনা কিছুটা অযৌক্তিক। ছাড়িয়ে নয়, তবে কাছাকাছি যাচ্ছি সেটা বলা যেতে পারে। ২০২৬ সাল নাগাদ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রয়ক্ষমতার পার্থক্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।