দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে বিশ্বে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্সের।
ইনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা নিবন্ধটি দীর্ঘ কর্মঘণ্টা নিয়ে প্রথম কোনো বৈশ্বিক গবেষণা। এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ দীর্ঘ কর্মঘণ্টা জনিত কারণে স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ২০০০ সাল থেকে এই হার অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
এরা মারা গেছেন স্ট্রোক অথবা হার্টের সমস্যায়। এ বিষয়ে প্রথমবার বিশ্বব্যাপী গবেষণা চালানো হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘ কর্মঘন্টায় কাজ করতে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্যাসিফিক অঞ্চলের মানুষদের। তারাই এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনা ভাইরাস মহামারিতে এই পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
এতে আরও দেখা গেছে, দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে ক্ষতিগ্রস্তের হার সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলের মধ্যে চীন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে।
এই গবেষণায় ১৯৪ টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে, সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ কর্মঘণ্টার চেয়ে ৫৫ বা তার বেশি কর্মঘণ্টার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ ও হৃদরোগের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
এই গবেষণায় ২০০০ সালে থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই মহামারির বছর এতে যুক্ত করা হয়নি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বাসায় বসে কাজ করা এবং বৈশ্বিকভাবে অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাওয়ার ফলে এই ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মারিয়া নিরা বলেন, ‘সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার কর্মঘণ্টা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ তথ্যের মাধ্যমে যা করতে চাই তা হলো কর্মীদের সুরক্ষায় আরও পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রচারণা চালানো।
গবেষণাটি করেছে আন্তর্জাতিক লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময়ে কাজ করার কারণে যেসব মানুষ মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই মধ্যবয়সী বা তার চেয়েও বেশি বয়সী। অনেক সময় এসব মৃত্যু হয় পরে। কখনো তা কয়েক দশক পরে। তবু এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে দীর্ঘ কর্মঘন্টার। যদিও এই গবেষণায় করোনা মহামারির সময়কে ধরা হয়নি, তবু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, কর্মক্ষেত্রের বাইরে থেকে কাজ করায় এবং অর্থনীতিতে মন্দার কারণে মৃত্যু এসব মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার ফ্রাঙ্ক পেগা বলেছেন, আমাদের সামনে বেশ কিছু প্রমাণ এসেছে যে, অনেক দেশেই করোনাকালে লকডাউন দেয়া হয়েছে। এ সময়ে কর্মঘন্টা বেড়ে গেছে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্মঘন্টার কারণে যেসব মানুষ অসুস্থ হন তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আক্রান্ত হন দীর্ঘ কর্মঘন্টার কারণে। এ বিষয়টি এখন বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নিয়োগকর্তাদেরকে কর্মীয় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিশ্ব সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়েসুসসহ সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা নিজেরাও মহামারির সময় আগের চেয়ে বেশি সময় কাজ করছেন। মারিয়া নিরা বলেন, এই গবেষণার আলোকে তারা সংস্থাটির কাজের নীতি আরও উন্নত করবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল কর্মকর্তা ফ্র্যাঙ্ক পেগা বলেন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা নিয়োগকর্তার জন্য উপকারী হতে পারে কারণ এর ফলে কর্মীর কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির সঙ্কটের মধ্যে কর্মঘণ্টা না বাড়ানোটাই আসলে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।’