যদি মনে করেন কাজের তুলনায় আপনাকে কম পারিশ্রমিক দিচ্ছে প্রতিষ্ঠান, তাহলে উদ্যোগ নিতে হবে আপনাকেই। কেননা আপনি কাজ জানেন এবং সেই কাজের সমানুপাতিক পারিশ্রমিকই চান। এ প্রতিবেদনে বেতন বাড়ানোর কিছু উপায় তুলে ধরা হলো।
কৌশলের আশ্রয় নিন: সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিধি ব্যাপক। তাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হলে তার জন্য আপনি বাড়তি সম্মানী দাবি করতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠানেই এ ধরনের সম্মানীর সুবিধা থাকে। বিভিন্ন সময় আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করে, বোনাস ও ইনসেনটিভ দিয়ে কর্মচারীদের উৎসাহিত করে অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে আপনার প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ব্যবস্থা না থাকলে এবং আপনার বেতন জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে অফিসের সুপারভাইজার, হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সরাসরি এ ব্যাপারে কথা বলুন। তাদের পরামর্শ নিন।
প্রমোশনের বিষয়ে কথা বলুন: অফিসে যদি দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে আপনার, কিন্তু সে অনুসারে বেতন না বাড়ে তাহলে বসের কাছে প্রমোশনের ব্যাপারে কথা বলুন। কারণ প্রমোশন হলে আপনার বেতনও কিছু বাড়বে আশা করতে পারেন আপনি।
বদলীর সুযোগ নিন: চাকরি ক্ষেত্রে বদলী হওয়ার ব্যাপারটি ভালো-মন্দ দুই ধরনের সংবাদই বয়ে আনতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে বদলীর সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি পায়। তাই বেতন বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। যেখানে আপনি বদলী হচ্ছেন, সেখানকার জীবনযাত্রার মান, খরচ আপনার অনুকূলেও থাকতে পারে। নিজ জেলায় বদলীর সুযোগ থাকলে নেয়ার চেষ্টা করুন।
যোগ্যতা তুলে ধরুন: কর্মক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্যতর এবং আস্থাশীল কর্মকর্তা/কর্মচারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। অফিস যেন আপনার বিকল্প কাউকে ভাবতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ করার চেষ্টা করুন। স্বেচ্ছায় স্পেশাল প্রজেক্টগুলোতে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। সব কাজেই নিজের দক্ষতা ফুটিয়ে তুলুন। এতে আপনার অবস্থান দৃঢ় হবে, বেতন বাড়ার সম্ভাবনাও অনেক বাড়বে।
নিজেকে মূল্যায়ন করুন: আপনার বস যদি আপনার কাজের ব্যাপারে সন্তষ্ট না হন, তাহলে তার কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করুন। বসকে বুঝান কীভাবে টাকা ও সময় বাঁচিয়ে অফিসের জন্য আয় বাড়িয়েছেন আপনি। অথবা নতুন কোনো আইডিয়ার মাধ্যমে অফিসের কতটুকু উপকার আপনি করেছেন, বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলুন। একই সঙ্গে আপনার বেতন কেন বাড়ছে না ভালোভাবে চিন্তা করুন। আপনার দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেগুলোর সমাধান করুন।
সংকোচ ঝেরে ফেলুন: অনেকেই বেতন বাড়ানোর জন্য বসকে তোষামোদ করে বা তার করুণা চায়। এর পরিণাম ভালো হয় না। বরং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করুন নিজ গুণ ও যোগ্যতার মাধ্যমেই আপনার বেতন বাড়বে। কর্তৃপক্ষকে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে উপলব্ধি করার সুযোগ দিন। যথাযথভাবে আপনার দায়িত্ব পালন করুন। বসের সামনে সংকোচ না করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলুন, নিজের অর্জনটুকু তুলে ধরুন।
শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করুন: অফিসে আপনার বসের প্রতি, সহকর্মী, কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করুন। এতে আপনার প্রতি বসের ধারণা সমুন্নত থাকবে। বসের সঙ্গে সরাসরি বেতন বাড়ানোর কথা না বলে বরং কিভাবে আপনি অফিসে আরো অবদান রাখতে পারবেন সে সব বিষয়ে কথা বলুন। এভাবে এক সময় কাজের গতি দেখে আপনার বেতন বাড়ানোর ব্যাপারে বস নিজেই হয়তো উদ্যোগ নেবেন।
অবস্থা বুঝে অগ্রসর হোন: একেক অফিসের ব্যবস্থাপনা একেকরকম। কোনো কোনো অফিসে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উৎসব ভাতা ও আর্থিক সুবিধার সুযোগ থাকে। আপনি যে অফিসে কাজ করছেন সেখানে এ ধরনের সুযোগ নাও থাকতে পারে। বিষয়টি জেনে নিন। আপনার সমান পদের অন্যরা কেমন বেতন পাচ্ছে সেটাও জানুন। বেতন বাড়ানোর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করার আগে খেয়াল করুন অফিসে কর্মচারী ছাঁটাই হচ্ছে কি না। কারণ এ ধরনের পরিস্থিতিতে বেতন বাড়ানোর কথা বললে আপনার হতাশ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরে কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
চাকরি পরিবর্তন:বেতন বৃদ্ধির জন্য অফিসের বসের সঙ্গে দরকষাকষির চেয়ে চাকরি পুরোপুরি ছেড়ে দেবার চেষ্টা করতে পারেন। কেননা যেসব কর্মী একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, ২০১৮ সালে তাদের বেতন বেড়েছে ০.৬ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে যারা চাকরি পরিবর্তন করেছেন তাদের বেতন বেড়েছে সাতগুণ বেশি অর্থাৎ ৪.৫ শতাংশ।
একজন কর্মী যখন নতুন একটি চাকরিতে যোগদান করেন তখন সে তার দক্ষতার সবটুকু দেয় এই বিবেচনায় আগের তুলনায় সে বেশি বেতন লাভ করে। অন্যদিকে চাকরি পরিবর্তন করলে বেতন বাড়ানোর জন্য দরকষাকষির সুযোগও বাড়ে।
অধিক উৎপাদনশীল হওয়া:আমাদের বেতন কেন বৃদ্ধি পাবে? এর অনেক কারণ রয়েছে। এর সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী কারণ হচ্ছে আপনি কতটা উৎপাদনশীল। আপনি যদি দক্ষ হন তবেই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনি যদি অধিক উৎপাদন দেখাতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার বেতনও তেমনি অধিক হারেই বৃদ্ধি পেতে পারে।