সময় অমূল্য, এ কথা সকলের জানা। সময়ে অফিসে না পৌঁছলে বসের চোখ রাঙানি। সময়ে বাড়ি না ফিরলে পরিবারের লোকজনের গোঁসা। সব জেনেও সময়কে বশ মানানো মুশকিল। কোনও মতে নাকে মুখে গুঁজে সময়ে অফিস পৌঁছে গেলেও, ফেরা কখনই যেন সময়ে হয়ে ওঠে না।
এর প্রভাব প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পারেন না অনেকেই। অনেকে ভাবেন, অন্যদের থেকে বেশি কাজ করছেন। কিন্তু আসল সমস্যা টাইম ম্যানেজমেন্টের। যার ফল ভুগতে হয় নিজেকেই। প্রিয়জনের সঙ্গে দূরত্ব তো আছেই, প্রতি দিনের এই সমস্যা জন্ম দিতে পারে অবসাদেরও।
অফিস সময়ের পরেও অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা কোনভাবেই ভাল বস এবং কর্মকর্তার লক্ষণ নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন কোন বসের বদভ্যাসের কারণে সহকর্মীদেরকেও অফিস সময়ের পরেও দীর্ঘক্ষণ অফিসে অবস্থান করতে হয়। ধরা যাক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত অফিস সময় সকাল ১০ টা থেকে সন্ধা ৬.০০ পর্যন্ত। দেখা যায় একটি অফিসের বস সময়মত অফিসে আসেন এবং সময়মত অফিস ত্যাগ করেন। সে বস বদলি হওয়ার পর নতুন বস যোগদান করার পর নিয়ম নীতি পরিবর্তন হতে থাকে। নতুন বস প্রতিদিন রাত ৮ টার সময় সহকর্মীদের নিয়ে মিটিং শুরু করেন। মিটিং শেষ করেন রাত ৯ টায়। ফলে মিটিংয়ে উপস্থিতরাতো বের হতেই পারেননা সাথে অন্যান্য সহকর্মীরাও অফিস থেকে বের হতে সাহশ পাননা। আবার কোন বস প্রতিনিয়ত অফিস সময়ের পর জরুরী ফাইল পত্র নিয়ে বসেন এবং কাজ শেষ করেন অনেক রাত পর্যন্ত।
বিশ্বের অনেক কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে অফিস সময়ের শেষে অফিসে অবস্থান করার কোন নিয়ম নেই। বিশেষ প্রয়োজনে অবস্থান করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বেসরকারী ব্যাংকের নতুন শীর্ষ নির্বাহী যোগদান করেছেন। তিনি ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা/কর্মাচারীদেরকে অফিস সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে অফিস ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোপূর্বে কোন নির্বাহী এ ধরণের নির্দেশ দেয়নি। তার এ নির্দেশ শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেই নয় দেশের পুরো ব্যাংকিং মহলে প্রশংসা পেয়েছে।
অফিস সময়ের পরেও অফিসে অবস্থান করার ফলে কর্মকর্তা/কর্মাচারী এবং তাদের পরিবার পরিজনের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। মনে রাখতে হবে প্রত্যেক সরকারী/বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা/কর্মাচারীদের ব্যক্তিগত/পারিবারিক/সামাজিক জীবন ও এসব ক্ষেত্রে তাদের অবদান আছে। ব্যক্তিগত পেদারিত্বের উন্নয়ন, বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা, ছেলেমেয়েদের জীবন গঠন তথা সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে। তাছাড়া, বিলম্বে অফিস ত্যাগের ফলে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল, ওভারটাইম, আপ্যায়ন সহ অফিসের বিভিন্ন খরচও বাড়তে থাকে। তাই নির্দ্দিষ্ট সময়ে অফিস ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদেরই দায়িত্ব। সে সাথে অফিসের বসদের মানসিকতার পরিবর্তন এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট মেনে চলার ব্যাপারে অধীক সচেতন হওয়া উচিত।
একটু পরিকল্পনামাফিক ভাবে কাজ করলে গোটা ব্যাপারটা সহজেই গুছিয়ে নেওয়া যায়। এখানে রইল অফিসে টাইম ম্যানেজনেন্টের আট দাওয়াই।
- সপ্তাহের শুরুতে যে কাজগুলি সারতেই হবে তার একটা তালিকা করুন। ডেস্কের পাশেই থাকুক সেই তালিকা। যে কাজগুলি সারা হয়ে যাচ্ছে, সেগুলিকে তালিকা থেকে বাদ দিন।
- আসা যাক ডে টু ডে অপারেশনে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের প্রথম দু’তিন ঘণ্টার সঠিক ব্যবহার জানা খুব জরুরি। অনেকেই এই সময়টা ভুল ভাবে অপচয় করে ফেলেন। তার পরে আর গোছাতে পারেন না।
- নিজের জন্য কতটা সময় ব্যবহার করবেন ঠিক করুন। টিফিন ও সহকর্মীর সঙ্গে আড্ডার জন্য কতটা সময় ব্যয় করলে আপনার কাজ শেষ করতে সমস্যা হবে না, সেটা স্থির করুন। প্রথম কয়েক দিন ঘড়ি ধরে তা মেনে চললেই আপনার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে।
- 'না' বলতে শিখুন। অনেকেই সৌজন্যের খাতিরে না বলতে পারেন না। অন্যের কাজের বোঝাও নিয়ে নেন। অফিসে এই অপেশাদারিত্বের মাসুল দিতে হয় নিজেকেই।
- ডেস্ক গুছিয়ে রাখুন। নিজের পরিপাটি বসার জায়গা অফিসে আপনাকে আরও বেশি ঝরঝরে রাখবে।
- কাজের সময়ে অন্য দিকে মন দেবেন না। নিজস্ব কেবিন থাকলে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বোর্ড ঝোলান। সহকর্মীর সঙ্গে পাশাপাশি বসতে হলে প্রথম কয়েক দিন কানে হেডফোন গুঁজতে পারেন।
- মোবাইল অ্যাপে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে অ্যালার্ম সেট করুন। অ্যাপয়ন্টমেন্ট রিমাইন্ডার থাকলে শেষ মুহূর্তে হাসফাঁস অবস্থা হবে না। দিনের মাঝে একবার অ্যালার্ম বাজলে আপনি কত দূর এগোলেন তার মূল্যায়ণ করতে পারবেন সহজেই।
- সপ্তাহান্তে নিজেকে নম্বর দিন। প্রথমেই সপ্তাহে ছয় দিন ঠিক সময়ে বেরোতে পারবেন না। নিজের ওপর চাপ না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে পারফরম্যান্সের উন্নতি করুন।