কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পুরো খাতের সুশাসন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাই এ খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি রূপরেখা চেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীরা।
এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সংকট নিরসনে ৭ শতাংশ সুদে ৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল চাওয়া হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির, মহাব্যবস্থাপক মো. জুলকার নাইনসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতে এ খাতে কী কী সমস্যা আছে ও এটা থেকে উত্তরণে কী করণীয় তা প্রধান নির্বাহীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সমস্যা এবং এটা কীভাবে সমাধান করা যায়, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই খারাপ সেসব প্রতিষ্ঠান কিভাবে পুনর্গঠন করা যায়, এনবিআইএফগুলো যাতে অযথা উচ্চ সুদের অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছে এসএমএস না পাঠায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায় মডেলে এনবিআইএফগুলো আর কী কী সুবিধা পেতে পারে এসব বিষয় উঠে আসে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) সভাপতি ও আইপিডিসির এমডি মমিনুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের কারণে পুরো খাতে যে আস্থার সংকট হয়েছে সেটা একদিনে দূর হবে না। তাই চিন্তাভাবনা করে একটা পন্থা বের করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে এ খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে আমরা একটি রূপরেখা প্রণয়নের কথা বলেছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এ রূপরেখা তৈরি করা, যাতে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কি ধরনের শাস্তি এবং আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
আমাদের প্রস্তাবগুলো ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লিখিত আকারে পাঠাব। তারপরে হয়তো যৌথ কমিটি বসে পর্যালোচনা করে দেখব। দেশে বর্তমানে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের কারণে ছয়-সাতটি চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর একটি হলো পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস।
বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে অবসায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও আমানতকারীদের অর্থ যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছে না।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এগুলো পুনর্গঠন পরবর্তী ঘুরে দাঁড়াতে ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এগুলোর বাইরে ভালো ১০-১২টি বাদে যেসব প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকটে রয়েছে, তাদের জন্য আলাদাভাবে ৭ শতাংশ সুদে ৪ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। কি মেকানিজমে এ তারল্য সহায়তা দেয়া যায় সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈঠকটি মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কুশল বিনিময়সংক্রান্ত। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা এবং এটা থেকে উত্তরণে কি করা যায় সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।