কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, কাউকে বদলি, আবার কাউকে পদোন্নতি করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন ভোলার আশরাফুল ইসলাম দিপু। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসব টাকা হাতাতেন তিনি। পুলিশ রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন দিপু।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতারণা করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিপু টাকা হাতিয়ে নিতো। তার বিকাশ ও নগদের চারটি অ্যাকাউন্টে ২৭ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কোনও অ্যাকাউন্টেই এখন টাকা নেই। একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেলেও তাতে টাকা পাওয়া যায়নি।’
অষ্টম শ্রেণি পাস দিপু ফেসবুককেই প্রতারণার প্লাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছিল। তিনটি ফেসবুক আইডি চালাতো। এসব আইডিতে সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ছবি আপলোড দিতো। নিজেকে কখনও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর পরিচালক, আবার কখনও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তা পরিচয় দিতো।
সর্বশেষ নোমান গ্রুপের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে রাজধানীর ভাটারায় বসবাসকারী সুমি আক্তার (২৪) নামে এক তরুণীকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
মামলার বাদি সুমির স্বামী মীর সুজেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে গাড়ি ভাড়া নিতো সে। এভাবে আমার সঙ্গে দিপুর পরিচয়। দিপু নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা পরিচয় দিতো। আমাকে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে যেত। সেখান থেকে তাকে তুলে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম।’
মীর সুজেল আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রথমে বলে, কোনও টাকা লাগবে না। পরে ৩০ হাজার টাকা নেয়। এ ছাড়া আমাদের গাড়ি ভাড়াও দিতো না। আজ দেবে কাল দেবে বলে ঘোরাতো। তখন বুঝতে পারি সে বাটপার প্রকৃতির।’
এমন অন্তত ১৯ জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন দিপু। ভুক্তোভোগীরা নীলফামারী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বরিশাল ও ভোলা জেলার বাসিন্দা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দিপু বেশ ধূর্ত। হাতিয়ে নেওয়া টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রাখতো না। ভাইদের দিতো। ভাইয়েরা তা দিয়ে এলাকায় জমিজমা কিনেছে। তবে বিলাসী জীবন যাপন করতো দিপু।
নকল জিও লেটার বানিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নিজের বাগে আনতো দিপু। নিয়েছে পুলিশ প্রটেকশন ও সংবর্ধনাও! দিপুর প্রতারণার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম জানান, দিপু বহুমাত্রিক প্রতারণা করতো। সবকিছুই স্বীকার করেছে। তার সঙ্গে আরও যারা জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’