হাজার হাজার কোটি টাকার লোপাটের তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফিসিয়াল আদেশে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তার (শাহ আলম) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভেযোগ উঠেছে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে স্টাফ ‘ল’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
অভিযোগ উঠেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের ‘মাসোয়ারা’ দেয়া হতো। এসব অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদেরকেও ‘মাসোয়ারা’ হিসেবে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দেয়া হতো।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কোনো ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, প্রয়োজনে স্টাফ ‘ল’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হককে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিলে তিন দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দেন তিনি।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে রাশেদুল হক দাবি করেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অনিয়ম চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিতে হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব অনিয়ম ‘ম্যানেজ’ করতেন তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
আদালতে রাশেদুল হক বলেছেন, প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর ভালো সম্পর্ক ছিল। পিকে হালদারের মাধ্যমেই সব অনিয়মকে ‘ম্যানেজ’ করতেন তিনি। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং পরিদর্শন করার জন্য বছরে দুবার সহকারী পরিচালক থেকে যুগ্ম পরিচালক পদের দু’জন কর্মকর্তা আসতেন। যারা অনিয়ম এড়িয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেয়ার বিনিময়ে নিতেন ৫ থেকে সাত লাখ টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখভালের জন্য গত ২০১৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পান শাহ আলম। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পদোন্নতি পেয়ে একই বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হন, এখনও এ পদে আছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়। এসব দুর্নীতিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে রাশেদুল হক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আমরা জবানবন্দির আলোকে সেটি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেব। এখানে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মস্থল এখানে দু-একজন অপকর্ম করে ম্লান করবে এটা হতে পারে না। কোনো ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান কখনও নেবে না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে স্টাফ ‘ল’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে, পি কে হালদারের সহযোগী হয়ে প্রায় ৭১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে রাশেদুল হকের বিরুদ্ধে।