পুঁজিবাজারে মার্জিন নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া ১২ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নে গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মার্জিন ঋণ সমন্বয় করাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ সমন্বয়ের জন্য কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ‘ফোর্স সেল’ করছে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। এমন পরিস্থিতিতে মার্জিন ঋণের সুদের হার ১২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া বিএসইসির নির্দেশনা আগামী বছর থেকে বাস্তবায়ন করতে চান মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। আপাতত জুন পর্যন্ত সময় পাচ্ছে স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হলেও তা যথাসময়ে বাস্তবায়নের বিষয়ে অনড় থাকার কথা জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ব্যাংকঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামানো হলেও পুঁজিবাজারে তা কার্যকর করা যায়নি। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) হিসেবে, মার্চেন্ট ব্যাংকার ভেদে মার্জিন ঋণের সুদের হার সাড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্জিন ঋণের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ সুদ বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ১৩ জানুয়ারি বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, মার্জিন ঋণের তহবিলের খরচ হিসেবে ৩ শতাংশ সুদসহ সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ রাখতে পারবেন স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা।
বিএসইসি বলছে, সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ সুদের হার ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের জন্য স্বল্প সুদে ও সহজে তহবিল জোগানের ব্যবস্থা করা হবে। জানা গেছে, ১২ শতাংশ মার্জিন ঋণের সুদের হার বাস্তবায়নে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে সোমবার বিএসইসির কাছে লিখিত আবেদন করেছে বিএমবিএ। চিঠিতে ১২ শতাংশ সুদের হার বাস্তবায়নে আরো ১১ মাস সময়ের পাশাপাশি স্বল্প সুদে টাকা জোগাড়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
বিএমবিএর নেতারা বলছেন, দেশে সুদের হার ৯ শতাংশ হলেও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা এই সুদে ঋণ পাচ্ছে না। পুঁজিবাজার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকগুলো আমাদের ঋণ দিতে চায় না।
বিএমবিএ সেক্রেটারি জেনারেল রিয়াদ মতিন বলেন, ১২ শতাংশ মার্জিন ঋণের সুদের হার বাস্তবায়নে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে গত ২৫ জানুয়ারি আমরা বিএসইসির কাছে লিখিত আবেদন করেছি।
রিয়াদ মতিন আরো বলেন, “কোনো বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ ইকুইটি হয়ে গেলে তখন সেখান থেকে সুদ নেওয়া হয় না। তখন সেই সুদেরও জের টানতে হয়। সব মিলে তাদের ‘কস্ট অব ফান্ড’ অনেক বেশি হয়।” তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, পুঁজিবাজারের জন্য স্বল্প সুদে টাকা আনার। সে টাকা চলে এলে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের জন্য সুবিধা হবে।’
ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে বড় ভূমিকা আছে। তাই মার্জিন ইস্যু পুঁজিবাজারকে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সে জন্য বিএসইসি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বসে একটি সুষ্ঠু সমাধানে আসতে পারে। এটা যাতে বাজারকে প্রভাবিত না করে, বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত না করে সেই বিষয়ে একটি সুন্দর সমাধানে আসার অনুরোধ করব।’
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘সুদহারের ক্ষেত্রে বিএসইসির আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তবে শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউসের সঙ্গে বিএসইসি বৈঠক করেছে। বৈঠকে তাদের পক্ষ থেকে কমপ্লায়েন্স ও এনফোর্সমেন্ট জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার সময় চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জুলাই থেকে এনফোর্সমেন্ট কার্যকর হবে। এটির কার্যবিবরণী হবে তবে কোনো সার্কুলার বা চিঠি দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, জুন পর্যন্ত ঋণের সুদহার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনল কি না তা দেখা হবে না। এই সময়ে বেশি নিলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে জুলাই থেকে এটি কঠোরভাবে দেখা হবে। একই সঙ্গে এখন থেকে প্রতি মাসে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হবে।