ঢাকা মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
অগ্রে থাকবে অগ্রণী ব্যাংক
  • তাকী জোবায়ের
  • ২০২১-০১-২৭ ২১:৩১:০৭

এক সময়ে নানা সংকটে থাকা অগ্রণী ব্যাংক গত চার বছর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ব্যাংক খাতের বিদ্যমান নানা সংকটের মাঝেও আমানত, বিনিয়োগ, আমদনি-রপ্তানি বাণিজ্য, মোট সম্পদ, পরিচালনা মুনাফা, নিট মুনাফা, সম্পদের বিপরীতে আয়সহ প্রায় সব সূচকে ২০১৬ সাল থেকে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংকের সবগুলো সুচক দেখলেই বোঝা যাবে যে, অগ্রণী ব্যাংক কীভাবে এগোচ্ছে , রেমিট্যান্স আহরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম। মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম যখন অগ্রণী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন খেলাপিঋণ ছিলো ২৯ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। ‘অবিরত অগ্রযাত্রায় অগ্রণী’এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রণী। ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পাঁচ দশক পূর্ণ করেছে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পথে। অগ্রণী ব্যাংক এই দুটি বছরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বড় সাফল্য অর্জন করতে চাচ্ছে। কর্পোরেট সুশাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে জাতির পিতার হাতে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি।

অগ্রণী ব্যাংক দেশের মেগা প্রকল্পগুলো ও বড় বড় পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে ফাইন্যান্স করেছে। অগ্রণী ব্যাংকের সব ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত জবাবদিহিতা পাওয়া যাচ্ছে। সুশাসন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে আগে কিছু দুর্বলতা থাকলেও সেগুলো কাটিয়ে উঠছে ব্যাংকটি। সরকার আগামী পাঁচ বছরে অর্থনীতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চায়। বাড়াতে চায় সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এরই মধ্যে রেকর্ড অর্জন করেছে। এটি দুই অঙ্কের ঘরে নিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে এসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংক সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী দিনে ব্যাংকটিকে এ খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে ব্যাংকটির বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক বেশি জোর দিচ্ছে এসএমই ও রফতানিমুখী খাতে। এছাড়া ঋণ আদায়েও বিশেষ জোর দিতে দেখা যাচ্ছে।

অগ্রণী ব্যাংক নামকরণ করছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই অগ্রণী ব্যাংককে অগ্রে থাকতে হবে।

বর্তমান ম্যানেজমেন্ট ও পর্ষদ যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায়, সবার অগ্রে থাকবে অগ্রণী ব্যাংক। অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান লক্ষ হচ্ছে একটি প্রাণবন্ত স্থিতিশীল ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। এই ব্যাংকটি যাতে সবার উপরে থাকে, কোন ধরণের প্রভিশন ঘাটতি, খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, লোকসানি শাখা না থাকে সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ব্যাংকটির কর্মীবাহিনী। দেশের দারিদ্র দূর করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি ও লালনের জন্য অগ্রণী ব্যাংক তার শতভাগ মালিকানায় প্রতিষ্ঠা করেছে ‘অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি লিমিটেড’। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ এবং সিলেটে কিছু অঞ্চলে অত্যন্ত সফলতার সাথে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোম্পানিটি সাফাল্যজনকভাবে কাজ করে চলছে এবং বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্কিংয়ে শীর্ষ স্থান লাভ করেছে।

দেশের শেয়ার বাজারে মূলধন সৃষ্টি এবং পরিবৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রণী ব্যাংক তার নিজস্ব শতভাগ মালিকানাধীন ‘অগ্রণী ইক্যুইটি এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেছে। কোম্পানিটি সুনাম ও দক্ষতার সাথে দেশের শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অগ্রণী ব্যাংক বিভিন্ন বছরে প্রবাসী বাংলাদেশি অভিবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণের সুবিধার জন্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা এবং অস্ট্রোলিয়ায় নিজস্ব শতভাগ মালিকানাধীন চারটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। এই রেমিট্যান্স হাউজগুলি থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স আসছে। এসব দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী অভিবাসীরা বিদেশে বসেই নিজ দেশের ব্যাংক অগ্রণীর উত্তম সেবা পেয়ে সন্তষ্ট রয়েছে। দেশের ব্যাংক সমূহের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকই প্রথম বিনা জামানতে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের জন্য একটি ঋণ প্রকল্প চালু করে যার নাম ‘ অগ্রণী বিদেশ যাওয়ার ঋণ’। প্রোগ্রামটি অগ্রণী ব্যাংক প্রায় একদশক ধরে চালিয়ে আসছে। এই ধারণার ভিত্তিতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গঠিত হয়ে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চে সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও সহজ অ্যাপস চালু করা হয় যার নাম ‘অগ্রণী রেমিট’। অভিবাসীরা সিঙ্গাপুরস্থ অগ্রণীর কোন শাখায় না গিয়ে নিজের মোবাইলে ঘরে বসেই তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশে অবিস্থত তার পরিবারের নিকট টাকা পাঠাতে করতে পারছেন। দেশের অন্যান্য ব্যাংক যেখানে বিকাশের সাথে একমুখী চুক্তি রয়েছে সেখানে অগ্রণী ব্যাংক বিকাশের সাথে টু-ওয়ে বা দ্বিমুখী ফান্ড ট্রান্সফার চুক্তি করেছে।

অর্থাৎ অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব থেকে একজন গ্রাহক তার বিকাশ একাউন্টে টাকা প্রেরণ করতে পারবেন আবার তার বিকাশ একাউন্ট থেকেও অগ্রণী ব্যাংকের নিজ হিসেবে টাকা জমা করতে পারবেন। অগ্রণী ব্যাংকের ৯৫৮টি শাখার সাথে বিকাশ এর ২ লাখ ৪০ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে ইন বা ক্যাশ আউট করা যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে। ব্যাংকে না এসে গ্রাহক ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমেই কাজটি করতে পারছেন। প্রথম রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে অগ্রণী ব্যাংক আধুনিক ও বিশ্বজনীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ফ্যাক্টরিং শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ফ্যাক্টরিং এর উপর অগ্রণী ব্যাংকে ট্রেনিং এর ব্যবস্থাও সম্পন্ন হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে ফ্যাক্টরিং চালু হলেও বাংলাদেশে এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে। ফ্যাক্টরিংকে এগিয়ে নিতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক ৩ বছরের মধ্যে জনতা ব্যাংককে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় এবং ২০৩০ সালেল মধ্যে সোনালীকে ছাড়িয়ে দেশের বৃহত্তম ব্যাংকে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যাংকটি ২টি শর্ত দিয়েছিল; যার একটি হলো ট্রেজারি ফাংশনকে বিকেন্দ্রীকরণ করা। এটা অবশ্য ইতোমধ্যেই বাস্তবে রূপলাভ করেছে। দ্বিতীয় শর্তটি ছিলো, এখন থেকে অগ্রণীর প্রতিটি সদস্যকে আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, অগ্রণী ব্যাংক পরিবারের সদস্যরা তাদের ছুটি বাতিল করেও প্রতিষ্ঠান ও দেশের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। অগ্রণী ব্যাংকে রয়েছে দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত উৎতর্ষতার এক চমৎকার সংমিশ্রণ। অর্থায়ন বা ঋণ সুবিধাকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে বা সেবা খাতে কেন্দ্রীভূত না করে বহুমূখীকরণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটির অর্থ-স্বাস্থ্যেও একটি সুষম উন্নতি ঘটেছে অতি সাম্প্রতিকালে। অগ্রণী ব্যাংক আজ দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের উদ্ভাবনের রূপকার হয়ে উঠেছে। এর ব্যাংকিং কার্যক্রমে বহুমুখীকরণ ঘটেছে। ব্যাংকটি আজ সকল প্যারামিটারে সফলতম ব্যাংক হয়ে উঠেছে। এই সাফল্য এখন কোনো একটি বছরের অর্জিত সাফল্য নয়, অনবরত প্রতিটি বছরের। অগ্রণী ব্যাংক এখন রোল মডেল বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারে। রোল মডেল হলো এমন আদর্শ পথ বা পদ্ধতি যা অন্যরা অনুসরণযোগ্য মনে করবেন বা অনুসরণ করলে তারা উপকৃত হবেন। অগ্রণী ব্যাংক যেহেতু আজ উদ্ভাবনের পথে হেঁটে লাভের মুখ দেখেছে, নতুন স্বপ্নের পথ খুঁজে পেয়েছে, সেবার মানে সেরা ব্যাংক হয়েছে, অগ্রণীর উদ্ভাবনী পন্থাকে অনুসরণ করে অন্য ব্যাংকগুলোও লাভবান হতে পারবে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের নামের শেষে ‘পিএলসি’, সুবিধা-অসুবিধা
পদোন্নতি হলোনা, কি করবেন
রাশিয়ার উপর নিষেধজ্ঞায় বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রভাব