সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দেশের শেয়ারবাজারে এক প্রকার ধস নেমেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। ফলে বড় পতন হয়েছে সবকটি মূল্য সূচকের। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার।
তবে শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন দেখা দিলেও তাকে স্বাভাবিক বলছেন বিশ্লেষক ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, টানা দাম বাড়ার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে এখন কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শিগগির বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই লেনদেন অংশ নেয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে থাকে। ফলে সূচকেও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের তালিকায় নাম লেখানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। একইসঙ্গে বড় হতে থাকে সূচকের পতন।
লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পতন প্রবণতা চলায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫৫টির। আর ৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাতের একটি, প্রকৌশল খাতের চারটি, খাদ্য খাতের পাঁচটি, জ্বালানি খাতের দুটি, বীমা খাতের আটটি, আইটি খাতের দুটি, পাট খাতের একটি, বিবিধেরে দুটি ফান্ড, ওষুধের তিনটি এবং বস্ত্রের তিনটি কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া চারটি মিউচ্যুয়াল এবং দুটি করপোরেট বন্ড রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৪৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, সূচকের যে পতন হয়েছে তা স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন। কয়েকদিন ধরে বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এ সময় অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। রবি’র ১০ টাকার শেয়ার ৭০ টাকা হয়েছে। এখন দাম কমার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য সংশোধন হচ্ছে।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের ১১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রবি।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে ডিএসইতে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, সামিট পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল। লাফার্জহোলসিম এবং আইএফআইসি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৯৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৯টির এবং ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।