ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আইটি বিভাগে দুর্বলতা থাকলেও শেয়ারবাজারে আর ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসইর কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তারা।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী, শাহজাহান, মুনতাকিম আশরাফ, নাসরিন সুলতানা প্রমুখ।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে তারা সুবাতাস বইছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের আইটি বিভাগে অনেক দুর্বলতা আছে। এরপরও ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি হবে না। এখন সার্ভিলেন্স অনেক শক্তিশালী।
ইউনুসুর রহমান বলেন, আমি প্রায় তিন বছর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং সিনিয়র সচিব ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের বলতে পারি ১৯৯৬ এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত আমাদের লিগাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অত্যান্ত দুর্বল ছিল। আমাদের আইনকানুনের যথেষ্ট অভাব ছিল। ২০১০ সালের পর আমাদের লিগাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। এখন আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করতে পারি যে ঘটনাগুলো ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে হয়েছে, তেমন ঘটনা সামনের দিনে আর ঘটবে না।
তিনি বলেন, শতভাগ অটোমেটেড এক্সচেঞ্জ হিসেবে আমাদের আইটি স্ট্রাকচার যেমন হওয়ার কথা ছিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি স্ট্রাকচার সেই অবস্থায় নেই। এটা আমরা জেনেছি ৩-৪ মাস আগে। আপনারা কি চিন্তা করতে পারেন এমন একটি স্টক এক্সচেঞ্জে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট নাই। এর ফল কত খারাপ হতে পারে?
‘আমরা জানার পরপরই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা অনেকটা কাজ এগিয়ে নিতে পেরেছি। আমাদের কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়ে গেছে। কনসালটেন্ট প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে। এটা পরীক্ষা করার পর ফাইনাল রিপোর্ট হবে। এরপর টেন্টারে গিয়ে আধুনিক একটা ডাটা সেন্টার স্থাপন করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি এ বছরের জুনের আগেই এটা হয়ে যাবে। যেটা হওয়া উচিত ছিল আরও আগে’ বলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, যেখানে আইটি ব্যবহার করা হয় সেখানে নিয়মিত অডিট করতে হয়। অডিট করলে জানা যায়, আইটির কোন জায়গাটা দুর্বল আছে, কোনটা সবল আছে। আমরা এখন একটা আইটি অডিট টিম নিয়োগ করার কাজ চূড়ান্ত করেছি। শিগগিরই আইটির অডিটর নিয়োগ হয়ে যাবে। আরও ছোট ছোট অনেক কাজ আমাদের করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশির একটি স্টেকহোল্ডার যে মানের অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকে, আমরা ওই মানের একটি অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে ২৫০টির মতো স্টেকহোল্ডারকে সেবা দিচ্ছি। তাহলে বুঝতেই পারছেন জিনিসটা আমাদের জন্য কতটা কষ্টকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
ইউনুসুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের শেষে অথবা ২০২২ সালে চীনের টেকনোলজি কিভাবে গ্রহণ করব, সেটার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন নাসডাক এবং ফ্লেক্সট্রেডের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নাসডাকের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে ব্যবসার ভলিয়ম বেড়ে গেলে ফ্লেক্সট্রেডের সঙ্গে কিছু কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
রবিকুর রহমান বলেন, ২০০৯-১০ সালে আমরা বিনিয়োগকারীদের বলেছি- আপনারা লোন করে আসবেন না, স্বর্ণ অলংকার বিক্রি বা বন্ধক দিয়ে আসবেন না। বিদেশে কর্মরত ভাইদের টাকা নিয়ে আসবেন না, অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ নিয়ে আসবেন না।
তিনি বলেন, আমাদের টেনশন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে। উনারা না বুঝে বিনিয়োগ করে ফেলেন। ২০০৯-১০ সালে শেয়ার কিনে আমি ৪৫ শতাংশ লোকসানে ছিলাম। সেই শেয়ার আমি বিক্রি করিনি, ধরে রেখেছি। সেই শেয়ারে আমি আজকে প্রফিট করেছি। কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তো ধরে রাখতে পারবে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বলবো আল্লাহরওয়াস্তে আপনারা বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করবেন।
শাকিল রিজভী বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোনো সেক্টরে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান করা হয় না। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করার আহ্বান করা হয়। তবে কোনো কোনো সেক্টরে যদি মেনুপুলেট হয়, তাহলে বিএসইসির সহায়তায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভিলেন্স টিমের উচিত সেটা ধরা। তবে বিনিয়োগকারীদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।