যশোর ও খুলনায় ১৫ দিন চিকিৎসার পর অর্থাভাবে অচেতন অবস্থায় গরম পানিতে দগ্ধ শিশু সিয়ামকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন বাবা সুজন হোসেন। চিকিৎসকরা বলেছেন ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করতে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করতে না পেরে যেন শিশুটির মৃত্যুর জন্যই অপেক্ষা করছিল পরিবারটি।
এ খবর জানতে পেরে পরিবারটির পাশে দাঁড়ালেন যশোরের চৌগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
জানা যায়, যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের সুজন হোসেনের চার বছরের শিশু সন্তান সিয়াম হোসেন গত ৪ অক্টোবর উঠানে খেলছিল। এ সময় পাশের বাড়ির আজিজুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম কাপড় পরিষ্কার করার জন্য পানি গরম করছিলেন। একপর্যায়ে ওই গরম পানি বড় গামলাতে রেখে অন্য কাজে চলে যান তিনি। এ সময় শিশু সিয়াম গামলা ভর্তি গরম পানিতে বসে পড়ে। এতে শিশুটি মারাত্মক দগ্ধ হয়।
সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। শিশুটির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই দিনই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে সাতদিন চিকিৎসার পর শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। খুলনা মেডিকেলে আটদিন চিকিৎসা করানো হয়। সিয়ামের বাবা সুজন হোসেন সন্তানকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সেখানে চিকিৎসায় তেমন উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক ঢাকায় বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দেন।
এরই মধ্যে সুজন হোসেনের কাছে যা টাকা-পয়সা ছিল তা শেষ হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে গুরুতর অবস্থায় সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন তিনি। সন্তানকে বাঁচাতে পাগলের মত অসহায় বাবা বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করতে থাকেন। তারপরও কেউ তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি। খবরটি থানার ওসি রিফাত খান রাজীব জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
পুলিশের মাধ্যমে দ্রুত যশোর থেকে অ্যাম্বুলেন্স এনে শিশুটিকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে শিশুটি সেখানে চিকিৎসাধীন আছে। আগের থেকে শিশুটি অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
শিশুটির বাবা সুজন হোসেন বলেন, ওসি স্যারের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাবদ বেশ কিছু টাকা সহযোগিতা করে ছেলেকে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন তিনি। আমরা তার অবদান কখনও ভুলবো না।
তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছেন- আগের থেকে ছেলে অনেকটা ভালো আছে।
চৌগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব বলেন, শিশুটিকে মারাত্মক দগ্ধ ও অচেতন অবস্থায় বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসার পর শিশুটির অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। চিকিৎসকরা আশা করছেন ধীরে ধীরে শিশুটির অবস্থার উন্নতি হবে।
ওসি বলেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। টাকার অভাবে একটি শিশুর প্রাণ অকালে ঝরে যাবে বিষয়টি আমি ভাবতে পারিনি। তাই ঢাকায় চাকরিরত আমার পুলিশ বন্ধুদের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে শিশুটিকে ভর্তির ব্যবস্থা করি। দোয়া করি যেন শিশুটি সুস্থ হয়ে বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসে।