ঢাকা বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বাঙালি ও নোবেল
  • শতঞ্জীব গুপ্ত
  • ২০২০-১২-২৩ ১১:৪৯:৩১

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পেলেন দারিদ্র নিয়ে কাজ করে। অমর্ত্য সেনও কল্যাণমুখী অর্থনীতির কাজের জন্যই এই পুরস্কার পেয়েছিলেন ২১ বছর আগে। এক জন বাঙালি আবার নোবেল পেয়েছেন বলে আমরা বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছি স্বাভাবিক ভাবেই। অভিজিৎ সম্পর্কে গুগল করে নিয়েছি। খুঁটিয়ে কাগজ পড়ে জেনে নিয়েছি তাঁর ডাকনাম বা স্কুল কেটে সিনেমা দেখার গল্প।

অমর্ত্য সেনের কোলে বসিয়ে বাচ্চাদের হাতেখড়ি দেওয়ার নাকি হিড়িক হয়েছিল, তাঁর নোবেল পাওয়ার পরে। এখন এক দল আবার, ‘একমাত্র বাঙালিই পারে, এত নোবেল জিততে’ জাতীয় কথাবার্তা শুরু করেছেন। কিন্তু এই শেষ ২১ বছরে কতটা বদলেছে বাঙালির জীবন? হ্যাঁ, সামর্থ্যবান, আলোকপ্রাপ্ত, শিক্ষিত বাঙালির কথাই বলছি।

এই ২১ বছরে হয়তো তিনি তিন বার গাড়ি কিনেছেন। পাঁচতারা হোটেলে বিবাহবার্ষিকী পালন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করেছেন বার কয়েক। শেষতম ঢাউস এসি গাড়িতে বসিয়ে ছেলে বা মেয়েকে একা স্কুলে পাঠিয়ে, দূষণ বাড়িয়ে রাস্তা জ্যাম করেছেন। নিরীহ প্রবীণ রিকশাচালককে গলির মধ্যে তুইতোকারি করেছেন তাঁর মাইনে করা ড্রাইভার, বা হয়তো তিনি নিজেই। অর্থাৎ, মোদ্দা কথা হল— এই বাঙালি, সাধারণ সমাজজীবন থেকে নিজেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ক্রমশ। নিজের পারফিউম-সুরভিত জামায় যেন এক বিন্দু দারিদ্র বা সাধারণত্বের ‘মলিনতা’ না লাগে— এটা তাঁর জীবনের অন্যতম, হয়তো প্রধান, সঙ্কল্প হয়ে উঠেছে। নিজের শ্রেণিচিহ্ন নিয়ে এতটাই তিনি সচেতন যে, জাঁক ও দেখনদারিই হয়ে উঠছে তাঁর রোজকার জীবনের সারসত্য।

অথচ কিছু দিন আগে পর্যন্তও সহজ, অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের প্রতি বাঙালির একটা সমীহ ছিল। বাবা-মায়েদের দৃঢ় ধারণা ছিল, বেশি ‘বড়লোক’ হয়ে যাওয়া খারাপ। ‘বড়লোকি’ দেখানো তো আরও খারাপ। সেই বাবা-মায়েরাও বদলে গিয়েছেন আজ। বাজার ও বিজ্ঞাপন ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছে ‘বড়লোকি দেখানো’র কায়দা-কানুন। নতুন উচ্চ বা মধ্যবিত্ত বাঙালি এখন সত্যিই ভুলে যেতে চান দেশভাগের পর কলোনির দরমার ঘরে তাঁদের বাপ-ঠাকুর্দার জীবনযুদ্ধের ইতিহাস। তাঁদের কাছে এখন সমাজ-সংযোগের মানে হচ্ছে, বেড়াতে গিয়ে সানগ্লাস পরে গ্রামের গরিব বাচ্চাদের কাঁধে হাত রেখে ছবি তোলা।

অমর্ত্য সেন যখন ছুটিতে শান্তিনিকেতনে এসে সাইকেল চালালেন, মিডিয়া তাঁকে প্রশ্ন করল এই ভাব নিয়ে যে, আরে, আপনি নোবেল লরিয়েট, তাও সাইকেল চালাচ্ছেন! মিডিয়া এটা বিশ্লেষণ করল না— গাড়ি বা মোটরবাইক ছেড়ে সাইকেল বেছে নেওয়াটা আসলে জীবনবোধ ও ভাল লাগার প্রশ্ন। যার সঙ্গে জুড়ে আছে পরিবেশ ও সমাজবোধ।

না। শিক্ষিত বাঙালি সেটা ভাবতে পারলেন না। বস্তুত ভাবনাচিন্তা করার অভ্যেসকেই তিনি সরিয়ে রাখলেন এবং ক্রমশ একটা আদ্যোপান্ত সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতিতে আরও জড়িয়ে গেল সামর্থ্যবান বাঙালির সমাজ-সংসার। তা হলে এমআইটি-তে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট বাংলায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেন, ‘‘গরিবের হাতে পয়সা আনতে হবে। বড়লোকের হাতে নয়’’, ড্রয়িংরুম-শোভিত বাঙালি সে-সব কথা আজ মন থেকে বিশ্বাস করেন তো ?

বাণিজ্যিক ব্যাংকের নামের শেষে ‘পিএলসি’, সুবিধা-অসুবিধা
পদোন্নতি হলোনা, কি করবেন
রাশিয়ার উপর নিষেধজ্ঞায় বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রভাব