ব্যাংকগুলোতে আমানতের চেয়ে ঋণ বেড়েছে বেশি হারে। গত জুন পর্যন্ত এক বছরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অথচ একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমানতের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে বলে ব্যাংকাররা ধারণা করছেন।
ব্যাংকাররা জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ স্থবিরতার পর অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়ছিল। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে গেছে। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এর ফলে আগের মতো অনেকে সঞ্চয় করতে পারছেন না। একটি অংশ আমানত ভেঙে সংসারের বাড়তি ব্যয় সামলাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ১১ লাখ ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৬৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ ৪ লাখ ৯ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৬৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের রয়েছে ৪৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭১ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণ ৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বা ৭৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকের ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ রয়েছে।
ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে কতটুকু পরিমাণ ঋণ দিতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদ্যমান নিয়মে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে। ইসলামী ধারার ব্যাংক দিতে পারে ৯২ টাকা। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের ঋণ- আমানত অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ৭৬ দশমিক ৫৫ এবং বিদেশি ব্যাংকের ৫৫ শতাংশ।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক খাতের চারটি আর্থিক সূচকের ভিত্তিতে ১০টি ব্যাংক চিহ্নিত করে নিবিড় তদারকির আওতায় নিয়েছে। যে চারটি সূচকের ভিত্তিতে এই তালিকা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ঋণ-আমানত অনুপাত, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, মূলধন পর্যাপ্ততা ও প্রভিশন ঘাটতি। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের ঋণ-আমানত অনুপাত পরিস্থিতি নির্ধারিত সীমায় থাকলেও ছয়টি ব্যাংক নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে। এ তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০২ দশমিক ২৮ শতাংশ রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের। বেসিক ব্যাংকের রয়েছে ৮৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সাম্প্রতিক কোনো মাসে এত বেশি ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়নি। আবার ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে রেকর্ড ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে এসেছে মাত্র ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে আরও ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এসব কারণে ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে শুধু গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে উঠে গেছে। ডলার বিক্রি এখনও অব্যাহত আছে। সব মিলিয়ে টাকার বাজারেও টান শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে এখন ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচুর ধার করছে।