কর্মীদের সর্বনিম্ন বেতনের পরিমার্জিত নির্দেশনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। সংগঠনটি বলছে, এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর খরচ কিছুটা বাড়লেও তা কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ জোগাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এই কথাগুলো বলেন এবিবির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম আর এফ হোসেন।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ও পুরনো ব্যাংকগুলোর কর্মীদের বেতন বাস্তবায়নে আলাদা নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া শহর ও উপজেলার কর্মচারীদের বেতন বাস্তবায়নে আলাদা নির্দেশনা রয়েছে। এর ফলে কর্মীদের সর্বনিম্ন বেতন বাস্তবায়ন আগের থেকে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে বলে মনে করছে ব্যাংক নির্বাহীদের এই সংগঠনটি।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘এবিবি প্রফেশনাল ব্যাংক কর্মীদের সংগঠন। প্রফেশনাল ব্যাংকার হিসেবে আমাদের সহকর্মীরা বা ব্যাংকের কর্মীরা যাতে মানসম্পন্ন ও যুক্তিসংগত পারিশ্রমিক পান আমরা সবসময় সেটাই চাই। ব্যাংকের কর্মীদের জীবনমান ও বেতন-ভাতার উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই অভিনন্দন জানাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের কর্মীদের বেতন কত টাকা হবে তা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত এবং এখন বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু নির্দেশনা দিয়েছে এ নিয়ে এবিবির কোনো বক্তব্য থাকা উচিত নয়। এবিবির পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে পাস করা মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে ব্যাংকের চাকরিতে আকৃষ্ট হয়, বেতন-ভাতা হতে হবে সেই লেভেলের। আমরা কখনই বলছি না যে ব্যাংকের কর্মীদের বেতন অযৌক্তিক পর্যায়ে হওয়া উচিত। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকের কর্মীদের বেতন-ভাতার সঙ্গে বেসরকারি খাতের অন্যান্য চাকরির বেতন-ভাতার একটি সামঞ্জস্য থাকবে। কিন্তু কত টাকা হবে সে বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না।’
গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের এন্ট্রি লেভেলের কর্মীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে একটি সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংকের শিক্ষানবিশ কর্মীদের সর্বনিম্ন ২৮ হাজার টাকা এবং শিক্ষানবিশকাল পার হলে সর্বনিম্ন বেতন ৩৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা ছিল ১ মার্চ থেকে।
ওই নির্দেশনাটির একটি অংশে কর্মীদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলেও পদোন্নতি দেওয়া থেকে বিরত থাকা বা চাকরিচ্যুত না করার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনাকালে ব্যাংকগুলো যখন নানা ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন এ ধরনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন হবে এমন দাবি নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে দেখা করেন ব্যাংক পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারা। সেখানে এবিবির তিনজন নেতাও ছিলেন। তারা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কিছুটা সময় চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পর্যালোচনা করবে বলেও আশ্বাস দেয়।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এর জনপ্রিয় লেখা পড়ুন:
কিংবদন্তী ব্যাংকার লুৎফর রহমান সরকারের ৮৯তম জন্ম দিনে
এর আগের দিন ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার কিছুটা সংশোধন করে বলে, আমানতের লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলেও কোনো কর্মীর পদোন্নতি আটকে দেওয়া যাবে না বা চাকরিচ্যুত করা যাবে না। তবে কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত কোনো অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ওই বৈঠকে আমাদের কনফিউশন দূর হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলেছে। তারা ব্যাংকের কর্মীদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া মেনে চলার নির্দেশনা দেয়। আমরাও এই বিষয়টি মেনে চলি। কেবল ব্যাংকে কেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মী যদি দিনের পর দিন তার পারফরম্যান্স উন্নত করতে না পারে তাহলে সে কোথাও টিকবে না। ব্যাংকের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে একটি প্রোপার ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। যাতে সেগুলো অডিট করা যায়। কোনো কর্মী যাতে বলতে না পারে যে, সে জানত না তার লক্ষ্যমাত্রা কী ছিল, বা তাকে বলা হয়নি তার পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছে।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘অধিকাংশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে অনুসরণ করছে। দুই-একটি ব্যাংক এই করোনাকালে হয়তো সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারেনি। এগুলো যাতে সংশোধন হয় তার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়েছি। এই প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য আমরা প্রয়োজনে এবিবি থেকে বিশেষ কর্মশালা করার কথাও বলেছি। আমরা এই চর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতার নির্দেশনা কিছুটা পরিমার্জন করে। ওই নির্দেশনায় ব্যাংকের জেনারেল সাইডের কর্মীদের বেতন আগের মতোই রাখা হয়। তবে ক্যাশ সাইডের কর্মীদের শিক্ষানবিশকালে ২৬ হাজার টাকা এবং এরপর ৩৬ হাজার টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়। এছাড়া এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য নতুন চালু হওয়া ব্যাংকগুলোকে কিছুটা শিথিলতা দেওয়া হয়। পুরনো ব্যাংকগুলোকে এপ্রিল থেকে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
এ নিয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছোট ও নতুন ব্যাংকগুলো এই নির্দেশনা এক বছর পর বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া শহর ও উপজেলার ব্যাংকের কর্মচারীদের বেতনের কিছুটা পার্থক্য হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন ব্যাংকগুলোর জন্য কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। প্রথম বছর ব্যাংকগুলোর খরচ কিছুটা বাড়লেও তা ব্যাংকের কর্মীদের দারুণভাবে উৎসাহ জোগাবে বলে আমরা মনে করি।’
আমাদের গ্রুপে যোগদান করতে নীচে ক্লিক করুনঃ
তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যাংক এই সার্কুলার দেওয়ার আগে থেকেই বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকে আমরা গত ১ জানুয়ারি থেকে এন্ট্রি লেভেলের কর্মীদের পারিশ্রমিক ৪০-৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছি। আমি জানি ইস্টার্ন ব্যাংকও তাই করেছে। আরও দুয়েকটি ব্যাংক এটা করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কাজেই এই ব্যাংকগুলোর জন্য বাড়তি খরচটা খুব বেশি হবে না।