তিন বছর আগে একসঙ্গে তিনটি ব্যাংক স্থাপনের প্রাথমিক সম্মতিপত্র বা লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) ইস্যু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রমও শুরু করেছে। কিন্তু তিন দফায় এলওআইয়ের মেয়াদ বাড়ানোর পরও লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্ত পূরণ করতে পারেনি পিপলস ব্যাংক লিমিটেড।
গত ৩১ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত ব্যাংকটির এলওআইয়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কোনোভাবেই আর পিপলস ব্যাংকের এলওআইয়ের মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানে ভর করে আবারো মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে পিপলস ব্যাংক। পিপলস ব্যাংকের এলওআইয়ের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনটি আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উঠছে। পর্ষদের সভা থেকে ব্যাংকটিকে শর্ত পূরণে আরো তিন মাস সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ডিসেম্বরে প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের এলওআইয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এর আগেও ব্যাংকটিকে শর্ত পূরণে একাধিকবার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শর্ত পূরণ করে চূড়ান্ত লাইসেন্স নিতে পারেনি ব্যাংকটি। তারা আবারো সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছে। আবেদনটি পর্ষদের সভায় উত্থাপন করা হবে। তবে এলওআইয়ের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি পর্ষদের এখতিয়ার। সাকিব আল হাসান ও তার মায়ের পরিচালক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে সাকিব আল হাসান দেশের একজন তারকা ক্রিকেটার। তবে পিপলস ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে তাকে সব শর্ত পূরণ করেই আসতে হবে। তিনি শর্ত পূরণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।
দেশের সব ব্যাংকের প্রতি মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে হলে সমপরিমাণ অর্থই মূলধন হিসেবে জমা রাখতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হলে প্রয়োজন হয় সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের। সে হিসেবে পিপলস ব্যাংকের প্রতিটি পরিচালক পদের জন্য সর্বনিম্ন ১০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে সাকিব আল হাসানকে। তবে ব্যাংকটির মালিকানায় আসতে তিনি প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেনস ও পিপলস নামে নতুন তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক গত বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। আর চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটিজেনস ব্যাংক। কিন্তু এলওআই পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পিপলস ব্যাংক এখনো লাইসেন্স নিতে পারেনি। পিপলস ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কয়েকজনের অর্থের উৎসে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে দেয়া এলওআই স্থগিত করা হয়েছিল। বিতর্কিত উদ্যোক্তাদের বাদ দিলে পিপলস ব্যাংকের এলওআইয়ের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূলধনের অর্থ জমা দিতে পারেনি ব্যাংকটি। শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এলওআইয়ের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তৃতীয় দফায় বর্ধিত ওই সময়েও ব্যাংকটি পরিশোধিত মূলধনের অর্থ জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী এমএ কাশেম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের এ বাসিন্দা ব্যাংকের লাইসেন্স চেয়ে আবেদনের পর থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে তিনি প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। শুরুতে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা হতে অনেকেই আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তাদের বেশির ভাগই ছিটকে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আক্তার এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা একটি এনআরবি ব্যাংকের প্রভাবশালী পরিচালকের স্ত্রীও পিপলস ব্যাংকের পরিচালকের তালিকায় রয়েছেন।