কর ফাঁকি দিতে ও দেশ থেকে অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করায় গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্য পর্যালোচনা করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শুল্ক ও কর ফাঁকির মোট অর্থের পরিমাণ দেশের মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশ করা হলো যখন দেশের কিছু অসাধু শুল্ক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ব্যবসায়ীরা পণ্যের প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে কমবেশি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার করছে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশের হালনাগাদ তথ্য পেতে দ্য ডেইলি স্টার জিএফআইয়ের কমিউনিকেশনস কো-অর্ডিনেটর লরেন আনিকিসকে ইমেইল করলেও, এখন পর্যন্ত তার জবাব পাওয়া যায়নি।
জিএফআইয়ের এর আগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৮ সালের থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি করে বাংলাদেশর গড়ে প্রতি বছর ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছিল।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মিথ্যা ঘোষণার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারত। ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে দেশটি হারিয়েছে অন্তত ৬৭ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয় হিসেবে পাকিস্তানের ক্ষতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ।
শতাংশ হিসেবে মিথ্যা ঘোষণার কারণে ভারতের ক্ষতি দেশটির মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ, নেপালের ২০ দশমিক ০২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ১৯ দশমিক ২ শতাংশ ও পাকিস্তানের ক্ষতি মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
জিএফআইয়ের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী টম কার্ডামোন বলেন, 'যখন উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিকিৎসা সামগ্রী ও টিকা পেতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন সেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।'
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উচিত মিথ্যা ঘোষণা বন্ধ ও অর্থ পাচার রোধে তারা যেসব ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিল সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করা।'
তিনি জানান, বিএফআইইউ এর আগে অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করেছিল এবং বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
তবে এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।