কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের বিষয়টি বিণিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশ করে। গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে এবিবি।
বুধবার এক বার্তায় এবিবি জানায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সাক্ষাৎ হয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর শিরোনামে কয়েকটি মনগড়া সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনামগুলোর মধ্যে রয়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ক্ষমা চাইলেন ছয় ব্যাংকের এমডি, কারণ ছাড়া ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই হয়নি— বৈঠকে এবিবির দাবি, ব্যাংকের কর্মী ছাঁটাই না করার নির্দেশ ইত্যাদি।
ব্যাংকে কর্মীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ, খারাপ পারফরমেন্সের কারণে পদত্যাগ এবং ব্যাংকের শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত কারণে পদত্যাগ বিষয়ে দেশের কয়েকটি ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান নিরীক্ষা কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি কিছু প্রধান পত্রিকায় অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছাপা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবিবি নেতৃবৃন্দ সেদিন গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এ প্রসঙ্গে ব্যাংকগুলোর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, দেশের আইন যথাযথ পরিপালন করেই ব্যাংকে খারাপ পারফরমেন্স বা শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে কর্মীদের পদত্যাগ বা ছাঁটাইয়ের বিষয়টি ঘটে থাকে। অনেক কর্মীই স্বেচ্ছায় বেশি বেতন ও সুবিধা নিয়ে অন্য ব্যাংকে যেমন চলে যান, তেমনই নানা পারিবারিক কারণ, স্থায়ীভাবে বিদেশ গমন ইত্যাদি কারণেও বড় সংখ্যক কর্মী স্বেচ্ছায় তাদের চাকরি ছাড়েন।
যেসব ব্যাংকে আলাদা কমিশন আয়ভিত্তিক সেলসফোর্স রয়েছে, সেসব ব্যাংকের পদত্যাগকারী কর্মীর সংখ্যা স্বাভাবিক কারণেই বেশি হয়। অনেক ব্যাংক আবার অন্য ব্যাংকের প্রশিক্ষিত সেলস কর্মীদেরকে স্থায়ী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে। মিটিংয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন যে, যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো ব্যাংক কোনো পদত্যাগকারী কর্মীর পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করে থাকে, তাহলে এবিবি এর নিন্দা জানায়।
এবিবি নেতৃবৃন্দের এসব তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান শোনার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিছু ব্যাংকে নিরীক্ষা চলমান থাকা এবং এর শেষে বস্তুগত তথ্যের ভিত্তিতেই যে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ব্যাংক এমডিদের নিশ্চিত করে। গভর্নর তার বক্তব্যে করোনা মহামারি চলাকালীন কর্মীদের পদত্যাগ ও ছাঁটাই বিষয়ে সংবেদনশীলতার দিকে দৃষ্টি রেখে ব্যাংক এমডিদের মানবিক আচরণ প্রদর্শন করার আহ্বান জানান। তিনি ব্যাংকের প্রাথমিক স্তরের কর্মীদের কম বেতন প্রসঙ্গে ব্যাংক এমডিদের উদারতা প্রদর্শন করারও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন যে, চাকরি ছাড়া কর্মীর সংখ্যা মহামারির আগের বছরগুলোর চাইতে বেশি হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পুরো সাক্ষাৎটি একটি পরিপূর্ণ সৌহার্দ্যসুলভ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ সাক্ষাতে ব্যাংক এমডিদের ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি, অবস্থা ও কারণ তৈরিই হয়নি। প্রকাশিত সংবাদের এ অংশটুকু যেমন সর্ব মনগড়া, তেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক মিটিংয়ে উপস্থিত ব্যাংকারদের ‘ব্যাংকে অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্য চলে’, এমন কথা বলা হয়েছে দাবি করাও অপ-সাংবাদিকতা। সভায় ছয় ব্যাংক এমডির উপস্থিত থাকার কথাটিও একটি ভুল তথ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে এ রকম সুন্দর ও ইতিবাচক একটি আলোচনার সংবাদকে বিকৃত করে সংবাদপত্রে ভুল তথ্যসহ উপস্থাপনের নিন্দা জানাচ্ছে এবিবি।