বতর্মানে বাংলাদেশে বিদেশী ব্যাংকসহ মোট তালিকাভুক্তি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১ টি। ২০২০ সালের মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে কভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও তাকে মোকাবেলার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবাণী ও স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ক্রমে বাংলাদেশে যখন দফায় দফায় লকডাউনের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি,বে-সরকারি অফিস, আদালত ও শিল্পকারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল ঠিক তখনও দেশের অর্থনৈতিক শক্তিকে গতিশীল এবং উন্নয়নমুখী মেগা প্রজেক্টের কাজ যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্য কিছুটা সীমিত সময়ের হলেও ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ ছিলনা একদিনের জন্যও। আর তখন থেকেই মূলত: ব্যাংকারগণ অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজ নিজ বাসা থেকে বেড়িয়েছেন দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের জন্য।
দীর্ঘ পরিক্রমায় মহামারি করোনার মধ্যে যখন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বাহিরে বের হতে হয়েছে তখন পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকিতে পরে যায়। বিশেষ করে পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা একটি অনিশ্চয়তায় দিন পার করে। আর আক্রান্ত হয়েছিল অস্বাভাবিক ভাবে। এমনি করে বাহিরের ভাইরাস বহন করে ঘরে এনে যখন অসুস্থ হয়েছে সদস্যগণ তখন পরিবারের অন্য সদস্যরা একটুও বিরক্তি প্রকাশ কিংবা অফিসে যেতে ঘরের বাহিরে বের হতে নিরুৎসাহিত করেননি। যার ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটেছে ব্যাংক পাড়ায়। বর্হিবিশ্বের তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল রয়েছে আমাদের অর্থনীতি। আর আমারা সবাই জানি অর্থনৈতিক শক্তি না থাকলে কেবল করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করা তো দুরের কথা দৈনন্দিন জীবন- যুদ্ধে টিকে থাকাটাও একটি দুঃস্বপ্ন।
ব্যাংক সংগঠনের পরিসংখ্যান মতে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৪১ জন । এর মধ্যে গত জুন ২০২১ পযর্ন্ত কভিড-১৯ এর করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৯২২ জন। জুন পযর্ন্ত ১৬ মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪৯ জন। যাহা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পরে জুলাই -আগষ্টে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি হবে। আর ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের পরিবার পরিজনদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান যে দীর্ঘায়িত হবে তা উল্লেখিত হিসাব মতে ভালো ভাবেই অনুমেয়।
বতর্মানে দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং, ফিনানসিয়াল ইনক্লুশন, মাইক্রো মার্চেন্ট, ডিজিটাল পোষ্ট ব্যাংকিং সহ ইত্যাদি ব্যাংকিং চ্যানেলের সার্ভিস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার কারনে সুবিধা বঞ্চিত মানুষ সহ সকলের দোড়গোড়ায় ব্যাংকিং সার্ভিস গতিশীল ছিল অতিমারির মধ্যেও। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স আনার জন্য ব্যাংক যে নজির রেখেছে তা ছিল উল্লেখযোগ্য। ইন্টারনেট ব্যাংকিং এমনকি ব্যাংকিং কল সেন্টার সহ এটিএম সার্ভিস সচল ছিল ২৪ ঘন্টা। যা সত্যিই একটি নতুন চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। আর তা এই মহামারি কভিডের মধ্যে জাতীয় যোদ্ধা হিসেবে ভূষিত হতেপারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এর পরিসংখ্যান মতে: জুলাই -জুন-২০২১ এ রপ্তানি আয় ছিল ৩৮,৭৫৮.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স ছিল ২,৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রনোদনা প্যাকেজ লোন বাস্তবায়ন সহ ঐসব সাফল্য অর্জনে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ব্যাংকারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
যে কোন স্বীকৃতি অর্পিত কাজের প্রতি আরো দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলে। কভিড-১৯ এর মোকাবিলায় ইতিমধ্যে অনেক সন্মানিত পেশাজীবীদের কে গণমাধ্যমগুলো সম্মুখ যোদ্ধা ও সহযোদ্ধা হিসাবে ভূষিত করে প্রচার করছে আর তা প্রত্যাশিত ও যুক্তিযুক্ত। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজন মনে করেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মুল হোতা যেহেতু ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর কোন যুদ্ধই সফল হয়না অর্থের যোগান ও সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন ছাড়া সেহেতু এই কভিভ-১৯ যুদ্ধের মোকাবেলার হাতকে শক্তিশালী ও সহজতর করতে ব্যাংকারগণ তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কে কভিড-১৯ মোকাবেলার কার্যকরী যোদ্ধা হিসেবে সার্বিকভাবে ভুষিত করা এখনই প্রকৃত বা উপযুক্ত সময়।
লেখকঃ সিঃ এক্সিকিউটিভ অফিসার,এ,ডি, সি বিভাগ
ব্যাংক এশিয়া লিঃ।