বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংককে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হচ্ছে। দেশের নিবন্ধিত সমবায় সমিতির মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তরের জন্য করা হচ্ছে বিশেষ আইন। 'বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক আইন-২০২১' নামে আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। সমবায় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে খসড়া চূড়ান্ত করেছে। খসড়ার ওপর সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে খসড়ার ওপর মতামত চেয়েছে। মতামত নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
সমবায় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুল হক তালুকদার সমকালকে বলেন, শক্তিশালী সমবায় অবকাঠামো গড়ে তোলা ও এ খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সমবায়ীদের স্বার্থ রক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ থাকবে। বর্তমানে দেশের সমবায় সমিতিগুলোর আর্থিক চাহিদা সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। একে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হলে সে চাহিদা পূরণ করা যাবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চাঞ্চল্য ও কর্মসংস্থান বাড়বে।
বর্তমানে দেশে বিশেষায়িত তফসিলি ব্যাংক তিনটি। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি এবং এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিচালিত হয়। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও জুবিলী ব্যাংক বিশেষ আইন দ্বারা গঠিত অ-তফসিলি ব্যাংক। তবে এ ব্যাংকগুলো পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক কার্যক্রম করে না।
বর্তমান সমবায় ব্যাংক সমবায় সমিতি আইন-২০১৩ (সংশোধিত) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এর ইতিহাস বেশ পুরোনো। অবিভক্ত বাংলার সমবায় সমিতি ও কৃষক পর্যায়ে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে এ সমবায় ব্যাংক গঠন করা হয়। বাংলা ভাগের পর ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সমবায় ব্যাংক লিমিটেড নামে নিবন্ধন নিয়ে ঢাকার সদরঘাটে অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু করে। পরে জনসন রোডে এবং তারও পরে মতিঝিলে স্থায়ী কার্যালয়ের মাধ্যমে পুরোদমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এই প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড নামে নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে সমবায় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন প্রায় আট কোটি টাকা। বর্তমানে সরকারের কাছে ১৯ শতাংশ ও সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে ৮১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে ভবন, জমিসহ ৪৬৫ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি কৃষি ঋণ, প্রকল্প ঋণ, সরকারি, আধা সরকারি চাকরিজীবীদের কনজুমারস ঋণ, পারসোনাল ঋণ, স্বর্ণ বন্ধকি ঋণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সমবায় ব্যাংকের সদস্য প্রতিষ্ঠান ৪৭১টি।
ব্যাংকের কার্যাবলি:প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, 'ব্যাংকিং সংক্রান্ত সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম করবে সমবায় ব্যাংক। তবে কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, ক্ষুদ্র শিল্প ও একই ধরনের অন্যান্য উদ্যোগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সমবায় সমিতি, সমিতির সদস্য এবং অন্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ ও অন্যান্য যে কোনো বাণিজ্যিক সুবিধা দেবে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ব্যবসাসহ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করবে। নির্ধারিত মেয়াদ এবং শর্তসাপেক্ষ জামানতসহ বা ব্যতীত নগদ বা বস্তুগত ঋণ দিতে পারবে। তবে ঋণের ৫০ শতাংশ সমবায় সমিতির সদস্যের দিতে হবে। আমানত সংগ্রহ, চেক, ড্রাফট ও পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু করতে পারবে। স্বর্ণালংকার বা স্বর্ণপিণ্ড জামানত রাখতে পারবে। যে কোনো কনজুমারস ক্রেডিট পরিচালনা করতে পারবে। ঋণও নিতে পারবে ব্যাংকটি।
মূলধন:প্রস্তাবিত ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি শেয়ারের দাম হবে এক হাজার টাকা। এক কোটি সাধারণ শেয়ারে মূলধন সমানভাবে বিভক্ত থাকবে। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৪০০ কোটি টাকা। এর ৪৯ শতাংশ সরকার তথা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের হাতে থাকবে। বাকি ৫১ শতাংশ পরিশোধিত মূলধন পরিশোধ করবে নিবন্ধিত সমবায় সমিতি। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো যাবে।