বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইলে এসএমএস দিয়ে উচ্চ সুদে আমানতের টোপ দিচ্ছে তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। উচ্চ সুদের প্রলোভন দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে।
চিঠি দেওয়া হয়েছে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং ফার্স্ট ফাইন্যান্সকে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে, যা ২০১৮ সালের ২৬ জুনের সার্কুলারের নির্দেশনার লঙ্ঘন। উচ্চ সুদের প্রলোভন দেখিয়ে আমানত সংগ্রহের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- পত্র ইস্যুর তারিখ থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স 'কুইক সঞ্চয়' নামে একটি আমানত স্কিমের জন্য বিভিন্ন গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস দিচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনের মূল স্লোগান- ৫৪ মাসে মুনাফা তিন গুণ আনন্দ বহুগুণ। প্রাইম ফাইন্যান্স সঞ্চয় প্লাস মাসিক আয় স্কিমে প্রতি লাখে মাসে এক হাজার ২২ টাকা দেওয়ার অফার দিয়ে এসএমএস দিচ্ছে। এতে করে বার্ষিক সুদহার দাঁড়ায় ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ। একইভাবে ফার্স্ট ফাইন্যান্স সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে আমানতের জন্য এসএমএস পাঠাচ্ছে। এমন এক সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান এ রকম উচ্চ সুদের টোপ দিচ্ছে, যখন অনেক প্রতিষ্ঠান আগে জমানো টাকা ফেরত দিতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমান বাজারে এত উচ্চ সুদে আমানত নিয়ে ভালো কোনো গ্রাহককে ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা এসব প্রতিষ্ঠান আমানতে এ রকম সুদ অফার করলেও ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদই এখন সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের আমানতের গড় সুদ রয়েছে ৮ শতাংশের মতো। এত উচ্চ সুদের প্রলোভন দিয়ে নেওয়া আমানত আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
ঋণ অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত এখন সমালোচনার মুখে রয়েছে। অনেক দিন ধরেই এ খাতের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগের পর পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়। এর মধ্যে এনআরবি গ্লোবাল ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডির বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। প্রশান্ত কুমার হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বিআইএফসি দখল করে নানা জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যান বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল জোগানের বড় অংশ আসে ব্যাংক থেকে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো খাত চরম খারাপ অবস্থায় পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ গ্রাহকদের মতো অনেক ব্যাংকের টাকা আটকে থাকায় নতুন করে আর ব্যাংকগুলোও তেমন টাকা দিচ্ছে না। যে কারণে তহবিল সংকট চরম অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। অবশ্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান খারাপ অবস্থায় রয়েছে, তা নয়। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিছু ব্যাংকের চেয়েও আর্থিকভাবে সক্ষম। তবে খারাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাবে পুরো খাতের ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।