ঢাকা শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
প্রণোদনা ঋণের অপব্যবহার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৭-২৬ ১২:২৬:০৯

করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গত বছর প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। প্রণোদনা প্যাকেজের সিংহভাগ ছিল স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হচ্ছে প্রণোদনার ঋণ। সুদের অর্ধেক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কিন্তু কিছু গ্রাহক স্বল্প সুদের এ ঋণের যথাযথ ব্যবহার না করে শেয়ারবাজারসহ নানা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করছে।

নিজস্ব তদারকি ব্যবস্থায় এমন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অবস্থায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রণোদনার ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ফের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, প্রতিটি ব্যাংককে নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ দ্বারা যাচাই করে ঋণের ব্যবহার বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল রোববার এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণের যথাযথ খাতে ব্যবহার না হয়ে কিছু ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রণোদনা ঋণের টাকা নিয়ে ঋণগ্রহীতার আগের ঋণের দায় পরিশোধ করা হচ্ছে। ঋণের এমন অপব্যবহার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সুস্পষ্ট পরিপন্থি।

প্রণোদনা ঋণের এমন অপব্যবহার রোধ করতে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে 'বিশেষ সেল'-এর মাধ্যমে ঋণের ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যে ঋণ যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে বা হবে, সে উদ্দেশ্যেই ঋণের ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত নজরদারি করতে হবে। একই সঙ্গে প্রণোদনা ঋণের অর্থ দিয়ে ঋণগ্রহীতাকে তার বিদ্যমান অন্য কোনো ঋণ হিসাব সমন্বয় করতে দেওয়া যাবে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ঋণের উদ্দেশ্য স্বল্প সুদের ঋণ শিল্পে বা ব্যবসায় খাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করা। অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি সঞ্চার করা, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা টিকে থাকে এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়। এতে দেশে মহামারি সত্ত্বেও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী প্রণোদনা ঋণের ওই টাকা ব্যবসায় না খাটিয়ে শেয়ারবাজার বা জমি কেনার মতো অনুৎপাদনশীল খাতে খাটাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় ঋণের টাকা খাটিয়ে তারা নিজেদের যেমন ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন, তেমনি সরকারের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রণোদনা ঋণের এ অপব্যবহার কিছু ব্যাংকের জ্ঞাতসারে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের ঋণের অপব্যবহার হলে ঋণ গ্রহীতা সুদ ভতুর্কি পাবেন না। উপরন্তু ঋণ গ্রহীতা এবং ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকসহ সংশ্নিষ্ট সবার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রয়োজনে সেই ব্যবস্থা নেবে। এরই মধ্যে শত কোটি টাকার ঋণ অপব্যবহারের প্রমাণ পেয়ে তা আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের উত্থানের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ঋণের অর্থ শেয়ারবাজারে ঢুকছে। এতে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান হচ্ছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণোদনা ঋণসহ যে কোনো ঋণের অপব্যবহারের জন্য সরাসরি সংশ্নিষ্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের দায়ী করে ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার মোট ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ১০টি প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা, রপ্তানিমুখী শিল্প ও কৃষি খাতে ভর্তুকি সুদে বিতরণের জন্য ৯৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসের সার্বিক ব্যাংক ঋণের সুদে ভর্তুকির জন্য দুই হাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। আর সিএমএসএমই খাতের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আরও দুই হাজার কোটি টাকা। এসব প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে সিএমএসএমই ও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে তেমন অগ্রগতি না থাকলেও শিল্প ও সেবা খাতের ঋণ দ্রুত বিতরণ হচ্ছে।

গতকাল ব্যাংকের এমডি ও নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রণোদনা ঋণের অর্থ দ্রুত ছাড় করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, কভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। পাশাপাশি প্রণোদনা ঋণের অর্থ দ্রুততম সময়ে ছাড় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক নয়
ফুটবল খেলায় অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের ‘বিশেষ বোনাস’ দেয়ার আহ্বান এবিবির
ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা অবসরকালীন সুবিধা পাবেন না