নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচে অবিশ্বাস্য জয় পেল খুলনা। জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে যাওয়া আরিফুলের ব্যাটিং তাণ্ডবে জয়ে শুরু করল সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা।
জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে খুলনার প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। ১৮তম ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে শামিম হোসেনের উইকেট তুলে নেন সুমন খান। ১৯তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন তাসকিন আহমেদ। সেই ওভারে জাতীয় দলের এই তারকা পেসার খরচ করেন মাত্র ৭ রান।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে খুলনার প্রয়োজন ছিল ২২ রান। খেলার এমন অবস্থায় নিশ্চিত জয়ের সুবাস পাচ্ছিল তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বরিশাল। আগের তিন ওভারে ৪ গড়ে মাত্র ১২ রানে এক উইকেট শিকার করা জাতীয় দলের অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে শেষ ওভারে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক তামিম।
কিন্তু আগের তিন ওভারে ভালো বোলিং করলেও শেষ ওভারে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি মিরাজ। আরিফুল হক ঠাণ্ডা মাথায় ওভারের প্রথম, দ্বিতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে পরপর ছক্কা হাঁকিয়ে নির্ধারিত ওভারের এক বল আগেই দলের জয় নিশ্চিত করেন।
বরিশালের বিপক্ষে ১৫৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে দলীয় মাত্র ৪ রানে দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও ইমরুল কায়েসের উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় খুলনা। ১৭ রান করে ফেরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১৩মাস পর খেলায় ফেরা সাকিব আল হাসান ফেরেন ১৩ বলে ১৫ রান করে।
৩৬ রানে বিজয়, ইমরুল, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবের উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলকে খেলায় ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যান জহুরুল ইসলাম অমি ও আরিফুল হক। পঞ্চম উইকেটে তারা ৪২ রানের জুটি গড়েন। ২৬ বলে ৩১ রান করে আউট হন জহিরুল।
এরপর শামিম হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ফের ৪৪ রানের জুটি গড়েন আরিফুল। ১৮ বলে ২৬ রান করে ফেরেন শামিম। শেষ ওভারে পাঁচ বলে চার ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন আরিফুল। দলের জয়ে ৩৪ বলে চার ছক্কা আর দুই চারের সাহায্যে ৪৮ রান করে অপরাজিত থাকেন আরিফুল হক।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বরিশালকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় বরিশাল। স্কোর বোর্ডে কোনো রান যোগ করার আগেই শফিউল ইসলামের বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন জাতীয় দলের অলরাউন্ড মেহেদী হাসান মিরাজ।
ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে নামা পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়তেই শহিদুলের শিকারে পরিনত হন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার আগে ১৫ বলে মাত্র ১৫ রান করেন জাতীয় দলের এই ড্যাশিং ওপেনার। চারে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ বলে মাত্র ২ রান করে সাকিবের শিকার আফিফ হোসেন।
দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে ফিফটি তুলে নেয়ার পর আউট হন পারভেজ হোসেন ইমন। তার আগে ৪২ বলে তিন চার ও চারটি ছক্কায় ৫১ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর বরিশালের হাল ধরতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান।
শেষ দিকে ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। তার আগে ১০ বলে তিন ছক্কায় ২১ রান করে ফেরেন তিনি। ১৯তম ওভারের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে শহিদুলের শিকারে পরিনত হয়ে সাজঘরে ফেরেন আমিনুল ইসলাম, তাওহিদ হৃদয় ও সুমন খান। শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদের ৫ বলের এক চার ও এক ছক্কায় গড়া ১৫ রানের অপরাজিত ইনিংসের সুবাদে ১৫২ রান তুলতে সক্ষম হয় বরিশাল।
খুলনার হয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন শহিদুল ইসলাম। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন জাতীয় দলের দুই পেসার শফিউল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।
বরিশাল: ২০ ওভারে ১৫২/৯ (পারভেজ হোসেন ইমন ৫১, তাওহিদ হৃদয় ২৭,মাহিদুল ইসলাম ২১, তাসকিন ১২*;শহিদুল ৪/১৭)।
খুলনা: ২০ ওভারে ১৫৫/৬ (আরিফুল হক ৪*, জহুরুল ৩১, শামিম ২৬, মাহমুদউল্লাহ ১৭, সাকিব ১৫; সুমন খান ২/২১, তাসকিন ২/৩৩)।
ফল: খুলনা ৪ উইকেটে জয়ী