অনেকদিন পর আমার ছোটবেলার এক শিক্ষকের সাথে দেখা হলো। আমাকে দেখে স্যার অনেক খুশি হলেন। স্যারকে সালাম দিলাম। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই স্যার আমাকে বললেন, আমি তো মনে মনে তোকেই খুঁজছিলাম?
আমি: জ্বী স্যার, বলেন?
স্যার: রেপো আর রিভার্স রেপো রেট কি? কয়েকজন দেখলাম, এই নিয়ে কথা বলছে। তখন থেকে ভাবছিলাম, তোর সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করবো। তুই একটু সহজভাবে বুঝিয়ে বল তো।
আমি: আমাদের দেশের যে ব্যাংকগুলো আছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে হারে ঋণ নিয়ে থাকে, তাকে রেপো রেট বলে। এই ঋণ বিল কিংবা বন্ডের বিপরীতে নিতে হয়। আগে এই রেট ছিল ৫.২৫%। এখন এটাকে কমিয়ে ৪.৭৫% করা হচ্ছে।
স্যার: তাহলে ব্যাংকগুলো আগের থেকে কম সুদে ঋণ নিতে পারবে। ব্যাংকগুলোর সুবিধাই হলো। ব্যাংকের নগদ টাকা বাড়বে। বাজারেও টাকার প্রবাহ বেড়ে যাবে। আচ্ছা, রিভার্স রেপো রেট তাহলে কি?
আমি: ব্যাংকের কাছে যদি টাকা বেশি হয়ে যায়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সেই টাকা একটি নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে উঠিয়ে নিতে পারে, এটাকেই রিভার্স রেপো রেট বলে। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যদি চায়, তাহলে তাদের কাছে রক্ষিত অতিরিক্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রেখে যে সুদ পাবে, সেটাকেও রিভার্স রেপো রেট বলে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। আগে এই রিভার্স রেপো রেট ছিল ৪.৭৫%। এখন সেটা কমিয়ে ৪% করা হচ্ছে।
স্যার: রেপো রেট হচ্ছে ৪.৭৫%। আর রিভার্স রেপো রেট হচ্ছ ৪%। রিভার্স রেপো রেট কম কেন? এটা বেশি না কেন?
আমি: রিভার্স রেপো রেট সাধারণত রেপো রেট থেকে কমই হয়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময় চায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে ঋণ নেবে, সেটা বিভিন্ন উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করবে, যাতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। ব্যাংকগুলো যদি সেই কাজটা না করে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা তুলে নেয়। মনে করেন, এই তুলে নেওয়া টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য এক ধরনের আমানত। আর আমানতের সুদের হার সব সময় ঋণের সুদের হারের চেয়ে কমই হয়। এজন্যই রিভার্স রেপো রেট কম হয়ে থাকে।
স্যার: আচ্ছা, বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৪.৭৫% হারে ঋণ নিয়ে যদি মিল, কল-কারখানায় ঋণ না দিয়ে যদি এফডিআর কিংবা বন্ড কিনে থাকে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক কি করে?
আমি: এই কাজ বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় নিরুৎসাহিত করে। এ রকম করলে, রিভার্স রেপো রেট এর বিনিময়ে অর্থাৎ ৪% সুদের বিনিময়ে তখন টাকা তুলে নেবে।
স্যার: ওরে বাপরে বাপ, এখন বুঝতে পারলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক তো তাহলে অনেক কিছু করে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না।
আমি: জ্বী স্যার, আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
স্যার: তুই সুন্দর করে বলেছিস।
আমি: আমি যতটুকু জানি, সেভাবেই বললাম। এর মধ্যেও ভুল ত্রুটি থাকতে পারে।
স্যার: ঠিক আছে তুই তাহলে যা। ভালো থাকিস।
আমি স্যারকে সালাম দিয়ে ফিরে আসছিলাম। আর ভাবছিলাম, স্যারের এই বয়সেও নতুন কিছু জানার কত আগ্রহ!
লেখক : অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।