চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার (১৪ মে) মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদের আগে আর একদিন ব্যাংক খোলা থাকবে। এ সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন-বোনাস দিতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকরাও প্রয়োজনীয় টাকা তুলে রাখছে। তাই ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে। টাকা উত্তোলনের চাপে গ্রাহকসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১১ মে) রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সকাল থেকেই ব্যাংকের শাখাগুলোর ক্যাশ ও জমা কাউন্টারে সামনে লম্বা লাইন। পাশাপাশি বিভিন্ন চালানপত্র, ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন সেবার বিল জমা দেওয়ার লাইনও লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে অতিরিক্ত গ্রাহকের চাপে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারের কর্মকর্তাদের বেশ চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন জানান, আজ গ্রাহকের অনেক চাপ। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টাকা উত্তোলন বেশি হচ্ছে। কারণ পোশাক কারখানাগুলো বেতন বোনাস দেবে। তাই করপোরেট গ্রাহকরা আজই টাকা উঠাচ্ছে। অন্যদিকে আজ সকাল থেকেই ক্যাশ কাউন্টারে সাধারণ গ্রাহকদের প্রচুর ভিড়। স্বাভাবিক দিনের চেয়ে তিন চারগুণ বেশি লেনদেন হচ্ছে। এ সময় গ্রাহক টাকা জমা দেওয়ার চেয়ে বেশি উত্তোলন করছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ঈদের আগে শেষ দুই কর্মদিবসে সব সময় গ্রাহকের ভিড় থাকে। এজন্য আগে থেকে আমরা অতিরিক্ত ক্যাশ কাউন্টারে ব্যবস্থা করেছি। আজ সকালে থেকে গ্রাহকের আজকে অনেক ভিড়। চাপ সামলাতে কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। টাকা জমার দেওয়ার চেয়ে উত্তোলনের চাপ বেশি। তবে কোনো তারল্য সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে পারছে।
মতিঝিল ইউসিবি ব্যাংকের শাখায় ক্যাশ কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা তুলব। এতদিন বুথ থেকে টাকা তুলতাম। ডেবিট কার্ডসহ মানিব্যাগ হারিয়ে গেছে, ঈদের আগে পাব না। তাই টাকা তুলতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এক ঘণ্টা হয়েছে, এখনও টাকা তুলতে পারিনি।
এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধ ৬ মে থেকে ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ সময় ব্যাংকও সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হচ্ছে। লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত।
ঈদের আগে আগামীকাল (বুধবার) শেষ কার্যদিবস। তবে ঈদ শুক্রবার হলে শিল্প এলাকায় ১৩ মেও (বৃহস্পতিবার) ব্যাংক খোলা থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ৬ মে এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, ঈদের আগে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিক/কর্মচারী/কর্মকর্তাদের বেতন, বোনাস ও অন্যান্য ভাতা পরিশোধের সুবিধার্থে এবং রফতানি বাণিজ্য অব্যাহত রাখার স্বার্থে ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত পোশাক শিল্প এলাকার তফসিলি ব্যাংকের পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিত করে আগামী ১০ মে থেকে ১৩ মে (১৪ মে ঈদ হওয়া সাপেক্ষে) খোলা রাখতে হবে।