করোনার প্রভাবে কাজ হারিয়েছেন অনেকে। নিম্ন মধ্যবিত্তদের কেউ কেউ নেমে এসেছেন দরিদ্র মানুষের কাতারে। তাদের একটি অংশকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এনেছে সরকার। দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বা আর্থিক সহায়তা। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ব্যাংক হিসাব খোলার হার দ্রুত বাড়ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের নতুন ব্যাংক হিসাব বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগের মাস অর্থাৎ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাভোগীদের মোট ব্যাংক হিসাব ছিল ৭৫ লাখ ৫ হাজার। গত ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৩ লাখ ৭২ হাজার। অর্থাৎ গত এক বছরে এ ধরনের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ১৮ লাখ ৬৭ হাজার বা ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাংক হিসাবের মধ্যে গ্রাম এলাকায় আছে প্রায় ৬৬ লাখ। বাকি ২৮ লাখের মতো শহরে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর নতুন করে কাজ হারানোদের অনেককে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে। ফলে গত ফেব্রুয়ারির পর এ ধরনের হিসাব আরও বেড়েছে বলে জানান সংশ্নিষ্টরা। তবে এসব ব্যাংক হিসাবধারীর সবাই যে নিয়মিত সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা পান, তেমনটি নয়। একবার ভাতা পেয়েছেন বা দুর্যোগ বা বিশেষ কোনো সময়ে পান- এমন অনেকেও রয়েছেন এই তালিকায়।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়মিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা, দুস্থসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিকে ভাতা দেওয়া হয়। এর বাইরেও বিভিন্ন দুর্যোগে নানা সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়। করোনার কারণে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামা অনেককে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দিচ্ছে সরকার। এক লাখ কৃষককে দেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা করে। মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে এসব অর্থ বিতরণ হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (ইএফটিএন) মাধ্যমে সুবিধাভোগীর হিসাবে এ অর্থ পৌঁছে দিচ্ছে। বিপুলসংখ্যক নতুন হিসাবে অর্থ দিতে গিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ইএফটিএনে ব্যাপক চাপ তৈরি হওয়ায় সাধারণ লেনদেন অনেক ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর এসব ভাতা বিতরণ করতে গিয়ে সাধারণ সময়ের তুলনায় ইএফটিএনে চাপ বেড়েছে। কারিগরি ত্রুটি এড়াতে ইএফটিএনের সব পরিশোধ ভেঙে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এতে আজ যে পরিশোধ পাওয়ার কথা, তা হয়তো তিনি পরের দিন পাচ্ছেন। আবার আন্তঃব্যাংক তহবিল স্থানান্তর করতে গিয়ে অনেক সময় হয়তো সমস্যায় পড়ছেন গ্রাহকরা। দু-এক দিনের মধ্যে এর সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সরকারি ভাতা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১০ সালে কৃষকদের ১০ টাকায় হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাভোগী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পথশিশু, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকসহ আরও অনেককে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে কোনো ধরনের সার্ভিস চার্জ বা নূ্যনতম জমা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই। সব মিলিয়ে গত ফেব্রুয়ারি শেষে এ ধরনের বিশেষ হিসাব সংখ্যা আড়াই কোটি ছাড়িয়েছে। এক বছর আগে যা দুই কোটি ১৩ লাখ ছিল। এসব হিসাবের বড় অংশই গ্রামে, যা প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ। এ ধরনের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৮৩ শতাংশ রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, বাংলাদেশ কৃষি, অগ্রণী, জনতা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধির ফলে এ ধরনের হিসাব দ্রুত বাড়ছে। এ ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির ফলেও পিছিয়ে পড়াদের অনেকে ব্যাংক হিসাব খুলতে আগ্রহ দেখান। সব মিলিয়ে বিশেষ ব্যাংক হিসাব এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।