কৃত্রিম মুনাফার ওপর ভর করে মুনাফা বণ্টনের সক্ষমতা বাড়ানো হলো সবল ব্যাংকের। একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুনাফা বণ্টনের আগের অবস্থান থেকে সরে এসে গতকাল মঙ্গলবার নতুন এক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ১৫ শতাংশ বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে পারবে, ওই সব ব্যাংক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে ৩৫ শতাংশ মুনাফা বণ্টন করতে পারবে। আগে যা ছিল ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনায় গত এক বছর ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে গত বছর বলা চলে তেমন একটা ঋণ আদায় করা যায়নি। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে কাউকে খেলাপিও করা যায়নি। খেলাপি না করায় ব্যাংকগুলোর বাড়তি প্রভিশনও সংরক্ষণ করতে হয়নি। এতে প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকের মুনাফা না হলেও কৃত্রিম মুনাফা বেড়ে যায়। কৃত্রিম এ মুনাফার ওপর ভর করে ব্যাংকগুলো যাতে শেয়ারহোল্ডারদের অতিরিক্ত মুনাফা বণ্টন করতে না পারে সে জন্য মুনাফা বণ্টনের ওপর নির্ধারিত সীমা বেঁধে দেয়া হয়। মূলধন সংরক্ষণের বিবেচনায় ভালো ও খারাপ ব্যাংকের মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়, ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংক বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ১৫ শতাংশের বেশি মূলধন সংরক্ষণ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করতে পারবে। গেল বছর সমপরিমাণ মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে মূলধন সংরক্ষণ করতে হতো সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে।
আবার কোনো ব্যাংক সাড়ে ১৩ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে পারলে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশ নগদসহ ২৫ শতাংশ মূলধন লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। একই সাথে যেসব ব্যাংক ১১ দশমিক ৮৭৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে, তারা সাড়ে ৭ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। আগের বছরে সমপরিমাণ মুনাফা বণ্টন করতে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়েছে সোয়া ১১ শতাংশ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। তবে যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ নিয়েছে, তারা সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। আর যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুবিধা নিয়েছে তারা যদি ১১ দশমিক ৮৭৫ শতাংশ থেকে সোয়া ১২ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পারে তা হলে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুদান নিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নগদসহ ১০ শতাংশ মুনাফা বণ্টন করতে পারবে। একই পরিমাণ মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে আগে সোয়া ১১ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়েছে।
একই সাথে যেসব ব্যাংক বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুবিধা নিয়েছে তারা যদি ১০ দশমিক ৬২৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৮৭৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পারে তা হলে তারা মাত্র ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড বণ্টন করতে পারবে। আগে সমপরিমাণ মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়েছে। এ নির্দেশনায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারার ক্ষমতা বলে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য ব্যাংকগুলোকে মুনাফা বণ্টনের অনুমোদন দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনেক যাচাই-বাছাই করে গত মাসে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু স্টেক হোল্ডার এ ক্ষেত্রে বাদ সাধে। তারা বেশি হারে মুনাফা বণ্টনের সুযোগ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করে। এদের কারণে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অবস্থান থেকে সরে আসে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি এবং ১৫ শতাংশের বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ওই সব ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে ৩৫ শতাংশ মুনাফা বণ্টন করতে পারবে। এর মধ্যে নগদে সাড়ে ১৭ শতাংশ এবং বোনাস শেয়ার সাড়ে ১৭ শতাংশ।