ঢাকা বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
প্রভিশন ঘাটতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ ব্যাংকের মূলধন কাঠামো
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৩-১৪ ১২:১২:৩৯

রাষ্ট্রায়ত্ত-বেসরকারি মিলিয়ে ১১ ব্যাংক কয়েক বছর ধরেই প্রভিশন ঘাটতিতে ভুগছে। বর্তমানে এসব ব্যাংকের মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ওপরে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি, বিশেষায়িত দুটি ও ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক। প্রভিশন ঘাটতি এসব ব্যাংকের মূলধন কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ কেলেঙ্কারি, খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক পরিমাণ, মূলধন ঘাটতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ডজনখানেক ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে ভুগছে।

সূত্রমতে, করোনা মহামারির জন্য ২০২০ সালের জন্য ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের বিশেষ ছাড় দেয় সরকার। এতে বছর শেষে কাগুজে হিসাবে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসে। এ অবস্থায় দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ, প্রবৃদ্ধি, নিট প্রবৃদ্ধি এবং মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি-সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে তিন হাজার ২৮৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা ব্যাংক খাতের মধ্যে একক ব্যাংক হিসেবে সর্বোচ্চ। এছাড়া অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অগ্রণীর ঘাটতি এক হাজার ৩১৯ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

বেসরকারি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্টের ২১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭৩ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ১৯০ কোটি ৮৭ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১৬৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ৭৮ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এসব ব্যাংকের মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার কোটি টাকার ওপরে।

এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। জানা গেছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৮৫ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের সাত দশমিক ৪১ শতাংশ। এ হিসাব দেশের অভ্যন্তরীণ ও অফশোর ব্যাংকিং মিলিয়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে ব্যাংক খাতে সামগ্রিকভাবে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬৪ হাজার ৮০১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো সামষ্টিকভাবে রাখতে পেরেছে ৬৪ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বেসরকারি ৪১টি ব্যাংকের মধ্যে ১৭টির প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে। এসব ব্যাংকের উদ্বৃত্ত থাকায় ব্যাংক খাতের মোট হিসাবে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২১ কোটি টাকা। অথচ ১১ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে সাত হাজার ৩১৯ কোটি টাকা।

করোনাকালীন সরকার বিশেষ ছাড়ের প্যাকেজ দেয় ব্যবসায়ীদের। এর ফলে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণ গ্রহীতাকে নতুন করে খেলাপি দেখাতে পারবে না। এর ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও গত বছরের শেষ প্রান্তিকে তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ৫৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, আমানত সংগ্রহ করে সেই অর্থ ঋণ দিয়ে মুনাফা আনে ব্যাংক। আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিতরণকৃত সব ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের মান অনুযায়ী এ হার নির্ধারণ করা হয়। ঋণ পরিশোধের ধারা অনুযায়ী এ মান নির্ধারণ করা হয়। এটিও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দিয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, বিতরণকৃত ঋণের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ, নি¤œমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ডে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণের বিপরীতে  শতভাগ অর্থাৎ ১০০ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় থেকে এ হারে প্রভিশন রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। ঋণ অনুযায়ী এটি না রাখতে পারলেই তা ঘাটতিতে পরিণত হয়। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেলেই প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক নয়
ফুটবল খেলায় অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের ‘বিশেষ বোনাস’ দেয়ার আহ্বান এবিবির
ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা অবসরকালীন সুবিধা পাবেন না