ঢাকা বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
দক্ষতার সঙ্গেই নারীরা ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করছেন
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৩-০৮ ২০:৪৯:১০

বেশির ভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যর্থনা ডেস্কে দেখা যায় নারী কর্মী। গ্রাহকসেবা ডেস্কের চিত্রও একই। আমানত সংগ্রহ, কার্ড বিক্রি করতেও নারী কর্মীরা মাঠে যাচ্ছেন। শুধু এসব কাজে নয়, নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও রয়েছেন কিছু নারী কর্মকর্তা। এমন চিত্র দেখে মনে হয় মোট জনসংখ্যার মতো ব্যাংকেও অর্ধেক কর্মী নারী। বাস্তবতা হলো ব্যাংক খাতে নারী কর্মী ১৯ শতাংশের কম। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৬ শতাংশ।

তবে ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, হিসাব বিভাগ, অর্থ পাচার প্রতিরোধসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে নারী কর্মী খুব একটা নেই। অবশ্য যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা দক্ষতার সঙ্গে টিকে আছেন। অনেকেই বিভিন্ন বিভাগ সামলাচ্ছেন, সারা দেশে অনেক শাখাপ্রধান এখন নারী কর্মকর্তা।

আর ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে নারী কর্মী নেই বললেই চলে। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারী কর্মকর্তা কাজ করছেন। আর ৩-৪টি ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমে (এসএমটি) রয়েছেন নারী কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবার, নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশের কারণে এখনো ব্যাংক খাতে ভালো পর্যায়ে নারী কর্মকর্তারা পৌঁছাতে পারছেন না। নারী কর্মকর্তাদের চাকরি ছাড়ার হারও অনেক বেশি। ব্যাংকে যত কর্মকর্তা যোগ দিচ্ছেন, মধ্যম পর্যায় পর্যন্ত তত কর্মকর্তা টিকছেন না। আর শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার হার নগণ্য। নারী কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। এ কারণে নারী কর্মকর্তারা উঠে আসছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে পুরুষ কর্মী ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩২ জন। একই সময়ে নারী কর্মী ছিল ২৮ হাজার ৭৮ জন। সে হিসাবে ব্যাংক খাতে পুরুষের তুলনায় নারী কর্মী ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে প্রারম্ভিক পর্যায়ের ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ, মধ্যম পর্যায়ে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও উচ্চপর্যায়ের ৯ শতাংশ কর্মী নারী। দেখা যাচ্ছে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে নারী কর্মী কমতে থাকে। এ জন্য ব্যাংকে ৩০ বছরের কম বয়সের নারী কর্মী ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ, ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর ৫০ বছরের বেশি কর্মী মাত্র ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ফলে ব্যাংকের শুরুর দিকে যত কর্মী যোগ দেন, ৫০ বছর পেরোলে তার অর্ধেকও ব্যাংকে থাকেন না।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০-৩৫ বছর আগে ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পদে যোগ দিলে এখন উচ্চপর্যায়ে থাকার কথা। কিন্তু ওই সময়ে সেভাবে নারীরা আসতেন না। পরের দিকে আসলেও ছোট পদে আসতেন। ফলে তাঁরা উচ্চপর্যায়ে আসতে পারেননি। আবার অনেকে কিছুদিন চাকরি করার পর পরিবার সামলাতে ছেড়ে দিতেন, যেটা এখনো চলছে।’

আনিস এ খান আরও বলেন, ‘ধনী ও ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়েরা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে, অন্যরা সরকারি চাকরি পছন্দ করছে। ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে যেতে নারীদের সব ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে। প্রয়োজন ব্যাংকের ভালো ক্যারিয়ার গড়ার উদ্যোগী নারী। তাহলেই সামনের দিনে উচ্চপর্যায়ে আরও নারী কর্মকর্তা দেখা যাবে।’

ব্যাংক খাতে এমনিতেই নারী কর্মী কম। তার মধ্যে করোনার সময়ে গত ছয় মাসে সেই সংখ্যা আরও কমে গেছে। গত বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে নারী ব্যাংকার কমে গেছে ৪০২ জন। ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে অনেকে অবসরে গেছেন। আবার কোনো কোনো ব্যাংকে ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ ও অনেকে স্বেচ্ছায়ও চাকরি ছেড়েছেন। এ কারণে নারী ব্যাংকার কমে গেছে। নতুন করে নিয়োগ শুরু হওয়ায় নারী কর্মী আবারও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ছয় মাস পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লৈঙ্গিক সমতাভিত্তিক সূচক পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী,

  • ২০১৯ সালের জুনে ব্যাংক খাতে কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৫। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ছিলেন ২৫ হাজার ৭৭১ ও পুরুষ কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৪ হাজার ১০৪ জন।
  • গত ডিসেম্বরে ব্যাংক কর্মী বেড়ে হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৪৮০ জন ও পুরুষ কর্মী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ জন।
  • আর জুন শেষে ব্যাংকে মোট কর্মী ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৮ হাজার ৭৮ ও পুরুষ ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩২ জন।
  • গত ডিসেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী ছিল ১৭ হাজার ৭৯১ জন, জুনে তা কমে হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৩ জন।
  • বিদেশি ব্যাংকে নারী কর্মী ১ হাজার ৯৪ থেকে কমে হয়েছে ৯৭৮ জন। সব মিলিয়ে গত ৬ মাসে নারী কর্মী কমেছে ৪০২ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০০ সালের পর ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মী যোগ দেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিয়েও যোগ দিচ্ছেন। তবে বেশির ভাগই নারী উদ্যোক্তা, মানবসম্পদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তা (এসএমই) বিভাগের দায়িত্বে।

বিভিন্ন বিভাগ ও শাখাপ্রধান এমন চারজন নারী কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। যেটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার অনেক সময় নারী কর্মকর্তাদের দিয়ে ইচ্ছেমতো সুবিধা আদায় করা যায় না। এ কারণে নারী কর্মকর্তারা পদোন্নতিবঞ্চিত হন। তবে এখন শীর্ষ পদে যেতে নারী পরিচয় কোনো বাধা না বলে মনে করেন এই চার কর্মকর্তা।

এদিকে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদেও নারীর অংশগ্রহণ আছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে নারী পরিচালকের হার ৮ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকে পরিচালকদের মধ্যে ১৪ শতাংশ নারী। সরকারি ব্যাংকে সরকারই পরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকে। নারী উদ্যোক্তা, সাবেক নারী ব্যাংকার এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মচারীদের সরকারি ব্যাংকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেয় সরকার। আর বেসরকারি ব্যাংকে মূলত পরিচালকদের স্ত্রী, কন্যা ও পুত্রবধূরা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে আছেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চিত্রও একই। লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান হাফিজ আল আহাদ বলেন, নারী কর্মীদের কাজের পরিবেশ যাতে সুরক্ষিত থাকে সেই বিষয়টি সব সময় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। লংকাবাংলায় নারী কর্মী প্রায় ১৯ শতাংশ। যা প্রতিনিয়ত বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমরা শিখা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি, যা নারীদের সব ধরনের অর্থনৈতিক সেবা প্রদান দিয়ে যাচ্ছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক নয়
ফুটবল খেলায় অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের ‘বিশেষ বোনাস’ দেয়ার আহ্বান এবিবির
ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা অবসরকালীন সুবিধা পাবেন না