ঢাকা বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহক অভিযোগ বেড়েই চলেছে
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০২-২৭ ১১:৩৬:৪৫

সাতক্ষীরা জেলার হরিশ্চন্দ্রকাঠি নিবাসী দিনমজুর কৃষক সুজিত মণ্ডল ১০ বছর মেয়াদি একটি শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম হিসাব খোলেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে। মেয়াদান্তে উক্ত হিসাব হতে অর্থ উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গেলে তাকে জানানো হয়, উল্লিখিত সঞ্চয় হিসাবের বিপরীতে (আশি হাজার টাকার একটি ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি শুনে গ্রাহক রীতিমতো হতভম্ভ হয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং আবেদন ফরম পর্যবেক্ষণ করে ফরমে প্রদানকৃত স্বাক্ষরের সঙ্গে তার স্বাক্ষরের মিল নেই মর্মে শাখা ব্যবস্থাপককে অবহিত করেন। কিন্তু, শাখা ব্যবস্থাপক গ্রাহকের কথায় কোনো কর্ণপাত না করে ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রাহককে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে, ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জালিয়াতির মাধ্যমে তার হিসাব থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এমন তথ্য।

শুধু ভুয়া ঋণ তৈরি নয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের বিল জালিয়াতি, অন্যায়ভাবে সুদ আরোপ, কার্ডে অতিরিক্ত সুদ আরোপের মতো অভিযোগগুলো প্রতিনিয়ত জমা পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ বছর ঘুরলেই বাড়ছে।

সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার ৮৯৯টি অভিযোগ জমা হয়, যা পূর্বের অর্থবছরের চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি। এসব অভিযোগের পুরোটাই নিষ্পত্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সিলেটের জিয়া উদ্দিন গণি একটি ব্যাংকে ডাবল বেনিফিট স্কিমের বিপরীতে মুনাফা দিয়েছে ব্যাংকটি। তাকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা কম দেয় ব্যাংকটি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হয় বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি।

মাহাথি হাসান জুয়েল নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, ব্যাংক অন্যায়ভাবে ঋণ সুদহার বৃদ্ধি করছে। ব্যাংকে অভিযোগ জানিয়েও সমাধান হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্রাহকের ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং পত্র মারফত বিষয়টি গ্রাহককে অবগত করা হয়েছে। এছাড়া, আর্থিক খাতের তারল্য সংকটের উত্তোরণ ঘটলে গ্রাহকের সুদের হার হ্রাস করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে পায় গ্রাহককে পাঠানো চিঠিতে প্রাপ্তি স্বীকার নেই। এমনকি ঠিকানাও ভুল লেখা হয়েছে। কোনো তথ্যও দিতে পারেনি ব্যাংকটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে বিষয়টির সমাধান হয়। গ্রাহক পূর্বের সুদহারে ঋণ পরিশোধ করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর সেবা গ্রাহক ঠিকমতো না পেলে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর সুযোগ রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে এজন্য একটি পৃথক বিভাগও করা হয়। দক্ষ জনবলের মাধ্যমেই বিষয়গুলো সমাধান করা হয়। গ্রাহক যাতে ব্যাংকে গিয়ে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময় আন্তরিকভাবে কাজ করছে। অনেক সময় দেখা যায় ব্যাংকারদের অজানা কারণেই কিছু ঘটনা ঘটে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক সিদ্ধান্তই বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলোতে যায় না যথাসময়ে। এ সময় কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ আসা মাত্রই তা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখন প্রতিনিয়ত অভিযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাংকিং সেবাসংক্রান্ত। এসব অভিযোগের সবগুলোই বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে সেবা

পাওয়া ও ঋণসংক্রান্ত। এসব অভিযোগ একটু সময় লাগলেও অর্থবছরের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে পারছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) নামে একটি বিভাগ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ব্যাংকিং-সংক্রান্ত ইস্যুতে যেকোনো অভিযোগ এখানে জমা দেয়া যায়। টেলিফোন, অনলাইন, লিখিত ও কল সেন্টারের মাধ্যমে অভিযোগ জমা দেয়া যায় এ বিভাগে।

গ্রাহকের প্রাপ্ত অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে একজন কর্মীকে নিয়োগ দিয়ে থাকে এফআইসিএসডি। এরপরই অভিযোগের সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণ করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ বিভাগে মোট চার হাজার ৫৩০টি অভিযোগ জমা হয়। পুরোটাই নিষ্পন্ন হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৫২১টি অভিযোগ জমা হয়। যার মধ্যে নিষ্পন্ন হয় তিন হাজার ৫১৯টি। এর পরের অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পূর্বের বছরের চেয়ে ৭৬ দশমিক ৩১ শতাংশ অভিযোগ বৃদ্ধি পায়। আলোচিত সময়ে অভিযোগ জমা হয় ছয় হাজার ২০৮টি। এর মধ্যে অভিযোগ নিষ্পন্ন হয় ছয় হাজার ২০৬টি।

সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও অভিযোগ জমা হয় ৫৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। এ সময়ে মোট পাঁচ হাজার ৪৯৯টি অভিযোগ জমা হয়। যার মধ্যে পাঁচ হাজার ৪৯৩টি অভিযোগই নিষ্পন্ন হয়। শতাংশ হিসাবে যা ৯৯ দশমিক ৯০।

অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকের গ্রাহকদের মাঝে এ বিভাগের প্রচার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সর্বশেষ মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমেও অভিযোগ গ্রহণ শুরু হয়েছে। এজন্য অভিযোগ বৃদ্ধি পেলেও সমাধানের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে আনুপাতিক হারে। কারণ হচ্ছে প্রতিটি অভিযোগই যথাসময়ে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়। তারপরও কোনো পক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে আপিলের সুযোগও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে যাওয়ারও সুযোগ থেকে যায়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক নয়
ফুটবল খেলায় অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের ‘বিশেষ বোনাস’ দেয়ার আহ্বান এবিবির
ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা অবসরকালীন সুবিধা পাবেন না