একসময়ে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলকেন্দ্রিক (ইপিজেড) নির্ভর ছিল সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন ইপিজেডের বাইরে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন বেশি। বর্তমানে ইপিজেডের বাইরে থাকা কোম্পানিতেই বিনিয়োগ বাড়ছে। সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আসছে জ্বালানি এবং তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে। এফডিআইয়ের তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছে ব্যাংক খাতও। অন্যান্য খাত মিলিয়ে দেশে এফডিআইতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এফডিআই সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের পরই রয়েছে যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। এরপরই রয়েছে চীন।
তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬৯ কোটি ডলার। দেশটির সর্বোচ্চ বিনিয়োগ গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্যে। খাতটিতে এ পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার। এরপরই বিনিয়োগ রয়েছে বস্ত্র খাতে সাত কোটি, ব্যাংক খাতে ১৮ কোটি ৪১ লাখ, বিদ্যুৎ খাতে ১৯ কোটি, টেলিকমে ৬৬ লাখ, ট্রেডিং খাতে ছয় কোটি ২৬ লাখ, বিমায় ২৩ কোটি ৭৫ লাখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুই কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
মূলত বাংলাদেশে ২০টি দেশের বিনিয়োগ বেশি। এর বাইরে অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ রয়েছে অল্প কিছু পরিমাণের। করোনা মহামারিতে ২০২০ সাল পার করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে এফডিআইয়ে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিকে ইতিবাচক ধারায় ফেরে। ২০১৯ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের আলোচিত প্রান্তিকে এফডিআই প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।
এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নিয়মিত নীতিমালা সহজীকরণ করা হচ্ছে। এখন বিদেশি মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা, বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া, লভ্যাংশ পুনরায় বিনিয়োগ করা, মুদ্রা বিনিময় ইত্যাদি বিষয়ে সহজ হয়েছে। কিছু কিছু বিষয়ে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। আগে সব কিছুতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোর ওপর অনেক কিছুই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজেই আকৃষ্ট হতে পারেন। ফলে ভবিষ্যতে এর সুফল আরও বেশি পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এ পর্যন্ত দেশটির পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫০ কোটি ১৮ লাখ, নেদারল্যান্ডসের ১৪৯ কোটি ১৬ লাখ, সিঙ্গাপুরের ১৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ১১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা চীনের পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ কোটি ১১ লাখ ডলার।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান দশম। এ পর্যন্ত দেশটি থেকে বিনিয়োগ এসেছে ৬৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এছাড়া শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ ৩৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার ও পাকিস্তানের বিনিয়োগ রয়েছে ২২ কোটি ডলার।
করোনা মহামারির সময়ে গত বছরও ২৩২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ইপিজেড এলাকায় থাকা কোম্পানিগুলোয় মোট এফডিআই এসেছে ৫২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয় ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। ফলে এ সময়ে নিট বিনিয়োগ হয় ১৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
নন-ইপিজেড তথা ইপিজেড এলাকার বাইরের কোম্পানিতে মোট এফডিআইয়ের পরিমাণ ১৭৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয় ২৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এ সময়ে নিট বিনিয়োগ হয় ১৫৪ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। সার্বিক হিসাবে গত বছরে নিট এফডিআই এসেছে ১৭৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।
তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এফডিআইয়ের পরিমাণ হচ্ছে এক হাজার ৮৬৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে ৩৮৪ কোটি ৫৬ লাখ, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে ৩২৬ কোটি ৩২ লাখ, ব্যাংক খাতে ২৫২ কোটি ৯৯ লাখ, বিদ্যুতে ২০৭ কোটি ১৫ লাখ, খাদ্যে ১২৪ কোটি ১৮ লাখ, ট্রেডিংয়ে ১২৩ কোটি ৮২ লাখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২২ কোটি ৬৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ রয়েছে বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির।