দেশে ১ লাখ কোটি টাকা সম্পদের ব্যাংক ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। এবার এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো জনতা ব্যাংকের নাম। ২০২০ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।
যদিও গত এক দশকে বেশ কয়েকটি বড় আর্থিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে জনতা ব্যাংক। অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণকৃত বড় ঋণ যুক্ত হয়েছে খেলাপির খাতায়। এ নিয়ে ব্যাংকটি ঘিরে সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু সব আলোচনা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলেই সামনে এগিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।
১ লাখ কোটি টাকা সম্পদের ব্যাংকে উন্নীত হওয়াকে গৌরব ও মর্যাদার বলে মনে করছেন জনতা ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, দেশে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংক তৃতীয় বৃহত্তম। বিদায়ী বছরে জনতা ব্যাংকের মোট সম্পদ ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি মহামারীর মধ্যেও আমাদের ব্যাংকের প্রায় সবক’টি সূচকেই উন্নতি হয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তত্কালীন ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডকে জাতীয়করণের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল জনতা ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছরে এসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে ৬০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। ফলে ব্যাংকটির এডি রেশিও দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া ২৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে জনতা ব্যাংক।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। প্রয়োজন অনুযায়ী পুরো অর্থই মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিদায়ী বছরে ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ১৭৮ কোটি টাকা নগদ আদায় করেছে ব্যাংকটি। একই সময়ে অবলোপনকৃত ঋণ থেকেও ৪৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট বৈশ্বিক দুর্যোগের ফলে ২০২০ সালে দেশের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছে। কিন্তু এ সময়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে বেশ সাফল্য এসেছে জনতা ব্যাংকের। ২০২০ সালে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ১৮ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটির মাধ্যমে ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকার রফতানি হয়েছে। বিদায়ী বছরে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা ৭ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও জনতা ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় আছে বলে দাবি করেন আব্দুছ ছালাম আজাদ। তিনি বলেন, শুধু ২০২০ সালই নয়। বরং গত তিন বছরে ব্যাপক মাত্রায় নেতিবাচক সংবাদের মধ্যেও জনতা ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় আছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জনতা ব্যাংকের আমানত ছিল ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে এ আমানত ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদায়ী বছরে আমাদের ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এটি জনতা ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা-বিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ।
তবে বড় ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথাও জানিয়েছেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে প্রতিটি দিনই আমাকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। পথ চলতে হচ্ছে অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণকৃত বেশ কয়েকটি বড় ঋণ দুর্ঘটনার সঙ্গী হয়ে। ব্যাংকের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যাচ্ছে না। অনেকেই উচ্চ আদালতে রিট করে মামলায় স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। তবে আশার কথা হলো, দীর্ঘদিন খেলাপি থাকা বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। গ্রুপটির কর্তাব্যক্তিদের অনেক দিন থেকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টার ফল হিসেবে বিদেশ থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ টাকা পাঠিয়ে ঋণটি পুনঃতফসিল করেছে।
২০২০ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ এখনো খেলাপি। এ বিষয়ে মো. আব্দুছ ছালাম আজাদের ভাষ্য হলো, এননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছেই জনতা ব্যাংকের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আছে। এ দুটি ঋণ পুনঃতফসিল করা সম্ভব হলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসবে।