এক ব্যাংকের গ্রাহকের আমদানি ও রপ্তানি বিলে স্বীকৃতির বিপরীতে টাকা দিয়েছে আরেক ব্যাংক। কোনো কারণে গ্রাহক অর্থ পরিশোধ না করলে স্বীকৃতিদাতা ব্যাংকের পরিশোধ করার কথা। তবে সময় মতো তা পরিশোধ করছে না অনেক ব্যাংক। স্বীকৃত বিলের বিপরীতে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের আটকে আছে সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার সমপরিমাণ ৪৬৬ কোটি টাকা। অপরিশোধিত এসব বিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে খরচ বাড়াচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সব ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে আজ বুধবার ব্যাংকার্স সভায় অপরিশোধিত স্বীকৃত বিল নিষ্পত্তির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
স্বীকৃত বিল বলতে আমদানি, রপ্তানি বা অভ্যন্তরীণ পণ্য সরবরাহের বিপরীতে সৃষ্ট ডকুমেন্টকে বোঝায়। এ ধরনের ডকুমেন্টের বিপরীতে ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে স্বীকৃতি বা নিশ্চয়তা দেয়। কোনো কারণে গ্রাহক ঠিকমতো বিল পরিশোধ না করলে ব্যাংকই তা পরিশোধ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের বিপরীতে যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ হয়নি। এর মধ্যে স্থানীয় এক হাজার ১১০টি স্বীকৃত বিলের বিপরীতে আটকে আছে তিন কোটি ১২ লাখ ডলার। বর্তমানে ডলারের দাম বিবেচনায় যা প্রায় ২৬৪ কোটি টাকার বেশি। আর ২১১টি বৈদেশিক স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দুই কোটি ৩৮ লাখ ডলার সমপরিমাণ ২০২ কোটি টাকা আটকে আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ অপরিশোধিত স্বীকৃত বিলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক অপরিশোধিত বিলের কারণে বিদেশি ব্যাংক এবং দূতাবাস থেকে অভিযোগ বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। এতে বৈদেশিক ঋণপত্রের ক্ষেত্রে অ্যাড কনফারমেশন ও বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বাড়ছে। অন্যদিকে অপরিশোধিত স্থানীয় স্বীকৃত বিলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর পারস্পরিক অভিযোগ বেড়েছে। এ ধরনের ঘটনা অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং শৃংখলার পরিপন্থি।
জানা গেছে, ব্যাংকার্স সভায় করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটাতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণ বিষয়েও আলোচনা হবে। সরকার এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার ১৫৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৯টি প্যাকেজের আওতায় ঋণ হিসেবে ৯৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতের ৩৩ হাজার কোটি, রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার বেতন-ভাতার পাঁচ হাজার কোটি এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা তহবিলের বড় অংশই বিতরণ হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র শিল্প, কৃষক এবং নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, করোনার কারণে আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাড়েনি। আবার অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ বৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের পদক্ষেপের কারণেও ঋণের গতি কম। তবে সুদহার যেভাবে কমছে, তাতে বোঝা যায় বাজারে যথেষ্ট তারল্য রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামীতে ঋণের গতি বাড়বে। তবে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরের গড় মূল্যস্ম্ফীতি কমেছে। এ ধারা আগামীতে বজায় থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ম্ফীতি ৫ দশমিক ৪০ শতাংশে সীমিত থাকবে।
জানা গেছে, আজকের সভায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বা বিআইবিএম ২ তলা বেজমেন্টসহ ১৫ তলা একটি ভবন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী ব্যাংকার্স ক্লাবের স্থায়ী অফিসের জন্য জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণবাবদ সব ব্যাংককে তিন লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। ক্লাবটি স্থানীয় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ, দুস্থ ও অসুস্থদের আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে থাকে। এ ছাড়া ওই অঞ্চলের ব্যাংকারদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে খেলাধুলাসহ প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ইতোমধ্যে রূপালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও ন্যাশনাল ব্যাংক এই ক্লাবের তহবিলে তিন লাখ টাকা করে দিয়েছে।