নারায়ণগঞ্জে একটি ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের খাতায় বিদেশপলাতক ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। ঋণ আদায় করতে না পেরে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ব্যাংক। তার বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং মালামাল ক্রোকের আদেশ। দু’টি মামলার ওয়ারেন্ট থাকার পরও ফতুল্লা থানায় সম্প্রতি একটি ঘটনায় মামলার বাদি হয়েছেন ওই ব্যক্তি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মনিরুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তি জামতলা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ডি জি এম মোহাম্মদ ইয়াসীন জানান, মনিরুলের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় সে পলাতক রয়েছে। আমরা শুনেছিলাম সে মালয়োশিয়া পালিয়ে গেছে। কিন্তু মনিরুল বিভিন্ন ঘটনায় সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন এ খবর শুনে অনেকটা বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা দ্রুত এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেবো। তিনি ঋণ প্রসঙ্গে জানান, মনিরুলের ঋণগুলো ২০০৯ সালের মধ্যে নেয়। সেই সময় ঋণ দানে অনেক শিথিলতার সুযোগ নিয়ে সে ঋণগুলো গ্রহণ করেছিল। তবে তার অবস্থান এখনো আমরা পাইনি।
নারায়ণগঞ্জ অর্থ ঋণ আদালতে ব্যাংকের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত বন্ধঘোষিত মেসার্স মুন নিটওয়্যারের কাছে সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখার ২০১৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত পাওনা ছিল ৬৭ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৫৪ টাকা। মেসার্স মুন নিটওয়্যারের মালিক হলেন মনিরুল ইসলাম ও তার আরো তিন সহোদর। ওই ঘটনায় যুগ্ম জেলা জজ অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
অপর দিকে একই ব্যক্তি ফতুল্লার ধর্মগঞ্জের ডালডা কলোনি এলাকার মেসার্স এইচ এস ফ্যাশনের মালিক। তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এইচ এস ফ্যাশনের কাছে সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখার ২০১৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত পাওনা ছিল ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯১ হাজার ৩৬২ টাকা। ওই ঘটনায় যুগ্ম জেলা জজ অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। উভয় মামলায় সুদসহ মনিরুল ইসলামের কাছে ব্যাংকের পাওনা হয়েছে প্রায় দুই শ’ কোটি টাকা। উভয় মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এ দিকে সম্প্রতি মনিরুল ইসলাম ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এ ছাড়া এক মাদরাসা শিক্ষককে চাঁদার দাবিতে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি। আরো কয়েকজন ব্যক্তি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। দায় এড়াতে গত ৩ জানুয়ারি মনিরুল ইসলাম নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
মনিরুল ইসলামের ফুফা শফিউদ্দিন বলেন, মনিরুল ইসলামের বাবা ইসলাম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েক বছর পর ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির কারণে মনিরুল ইসলাম সব শিল্প কারখানা বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান।