ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ-কারীদের আস্থার শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক খাত। সম্প্রতি অন্য খাতের শেয়ার ছেড়ে পোর্টফোলিওতে ব্যাংক শেয়ার যোগ করছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে চাহিদা এবং দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে এ খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার। মূলত দীর্ঘদিন থেকে তলানিতে অবস্থান করছেন বেশিরভাগ ব্যাংক শেয়ার। যে কারণে এই শেয়ারে ঝোঁক বেড়েছে।
দীর্ঘদিন বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ থাকায় এক যোগে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের শেয়ারদর। যার জের ধরে বর্তমানে কিছু শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। এই বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছে ব্যাংক খাতের কোম্পানি। এই খাতের নেই অতিমূল্যায়িত শেয়ার। খাতভিত্তিক বিনিয়োগ বিবেচনা করলেও এ খাতটি এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। বর্তমানে এই খাতের শেয়ারের গড় মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে আট দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। এই খাতটি ছাড়া বর্তমানে আর কোনো খাতের শেয়ারের গড় মূল্য আয় অনুপাত ১০-এর নিচে নেই।
পুঁজিবাজার ভালো থাকায় ইতোমধ্যে সব খাতের শেয়ারের গড় পিই-রেশিও বা মূল্য আয় অনুপাত বেড়েছে। তবে এখনও বিনিয়োগ যোগ্য অবস্থায় রয়েছে বেশিরভাগ খাত। এর মধ্যে ব্যাংক খাত রয়েছে সবার শীর্ষে।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৪ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ১৭ দশমিক ১১ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৭ দশমিক ৬২ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ১৯ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে, বিমা খাতের ১৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ৫৬ দশমিক ১৭ পয়েন্টে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ২১ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে, খাদ্য খাতের ২২ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ৩১ দশমিক ৩১ পয়েন্টে, আর্থিক খাতের ৬৩ দশমিক ৪০ পয়েন্টে, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ১৫৮ দশমিক ০৯ পয়েন্টে, পেপার খাতের ৬১ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ১৭ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে এবং সিরামিক খাতের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ১২৪ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্যদিকে বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের গড় পিই-রেশিও অবস্থান করছে ১৮ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে। সেই বিবেচনায় মার্কেট এখনও বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, শুধু ব্যাংকই নয়, পুঁজিবাজারে এখনও বেশিরভাগ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পরিবেশ রয়েছে। তবে বিনিয়োগ করার বেলায় ভাবতে হবে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা কেমন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর শেয়ারহোল্ডারদের কী পরিমাণ রিটার্ন দিচ্ছে সেটাও বিবেচনায় নেয়া উচিত। ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী অনেক সময় গুজব বা অন্যের কথায় কান দিয়ে ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করেন। পরে মাশুল দিতে হয় তাদেরই।
একই বিষয়ে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতের গড় হিসেবে কিছু খাত অতিমূল্যায়িত মনে হচ্ছে। আর তা হয়েছে ওইসব খাতের কিছু শেয়ারের পিই-রেশিও বেশি সেই জন্য। এই ক্ষেত্রে খাত বিবেচনায় না দিয়ে কোম্পানি দেখে বিনিয়োগ করতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ১৫-এর নিচে থাকলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ বলে অ্যাখায়িত করা হয়। এটি ২০-এর ওপরে গেলে ওই কোম্পানির শেয়ার ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর ৪০-এর ওপরে পিই-রেশিও গেলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ওই শেয়ারে মার্জিন সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১০ সালের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীরা। কারণ ওইসব শেয়ারের দর সবচেয়ে বেশি কমে গিয়েছিল। অথচ এটি পুঁজিবাজারের শক্তিশালী খাত। অনেক আগেই এসব শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে চলে এসেছে। এই অবস্থান থেকে শেয়ার ক্রয় করলে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।