ঢাকা বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরেছে
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০১-২৩ ০৫:২২:৫০

শেয়ার বাজার এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে একবছর আগেও তা কেউ চিন্তা করেননি। ২০০৯-২০১০ সালে এই বাজারে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ফতুর হয়েছেন। এরপর থেকে টানা ১০ বছর মানুষ শেয়ার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এখন সেই বাজার শুধু চাঙ্গাই হয়নি, প্রতিদিন কোটি কোটি বিনিয়োগ করছেন মানুষজন।

শুধু তা-ই নয়, গত ছয় মাসে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ২০৫ জন। তাদের কাছ থেকে সরকার কর পেয়েছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর সার্বিকভাবে গত সাড়ে ছয় মাসে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা।

শেয়ার বাজারের তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর  গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা, যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরেছে। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের মধ্যে যে অনাস্থা ছিল, সেটি এখন দূর হয়েছে।’

শেয়ার বাজার এখন একটি শক্তিশালী বাজারে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।  সর্বশেষ তারা যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা হলো— যেসব কোম্পানি অন্যায়ভাবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সেসব কোম্পানিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে

শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলহাজ টেক্সটাইলে নতুন করে তিন জন নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিটির সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি গত বুধবার (২০ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত আলাদা দুটি আদেশ জারি করে।

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও কোম্পানিটি দুই বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। কিন্তু কোম্পানির অবস্থার উন্নয়নে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে তিন জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের উন্নয়নে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম  এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘শেয়ার বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে শেয়ার বাজারে তার সুবাতাস বইছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে যে ঘটনা হয়েছে, তেমন ঘটনা সামনের দিনে আর ঘটবে না।

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত শেয়ার বাজারের লিগ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অত্যান্ত দুর্বল ছিল।  আইনকানুনের যথেষ্ট অভাব ছিল। ২০১০ সালের পর আমাদের লিগ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। এখন আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করতে পারি, যে ঘটনাগুলো ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে হয়েছে, তেমন ঘটনা সামনের দিনে আর ঘটবে না।’

বুধবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে টানা সাত সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহে দেশের শেয়ার বাজারে কিছুটা দরপতন হয়েছে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি গেলো সপ্তাহজুড়ে কমেছে লেনদেন। সেই সঙ্গে কমেছে বাজার মূলধন।

গত এক সপ্তাহে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমেছে এক শতাংশের ওপরে। লেনদেন কমেছে ১৬ শতাংশের ওপরে। আর বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৪২০ কোটি টাকা।

অবশ্য এর আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৪ শতাংশ। এর আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান সূচকটি বেড়েছিল এক হাজার ৩৭ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি টানা সাত সপ্তাহ উত্থানের পর গত সপ্তাহে পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ২৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগে সাত সপ্তাহের টানা উত্থানে সূচকটি বেড়েছিল ৫৪৬ পয়েন্ট।

ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ২৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ১৮ শতাংশ। এর আগে টানা পাঁচ সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ২০৪ পয়েন্ট।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৮৪টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ২২৯টির। আর ৫১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে সাত হাজার ৮২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৯ হাজার ৩৪৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে এক হাজার ৫১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা, বা ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

শীর্ষ ডিলার ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ
প্রাইমারি ডিলার হিসেবে অনুমোদন পেল রূপালী ব্যাংক
হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ইস্যু করবে আইসিবি