গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক সিনিয়র এক্সকিউটিভ অফিসার সিলভিয়া আক্তার রিনির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
মঙ্গলবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে উপ পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ব্যাংক এশিয়ার দিলকুশা শাখা থেকে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিপরীতে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত মূল্য বা সুদের প্রাপ্য টাকা গ্রাহককে পরিশোধের পর সঞ্চয়পত্র বা সুদের কুপনের বিপরীতে ৪৫৪টি লেনদেনের মাধ্যমে সর্বমোট ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫২০ টাকা সঞ্চয়পত্রের জিএল হেড থেকে নগদ ও অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের মাধ্যমে অতিরিক্ত উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়, তিনি ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড এর দিলকুশা শাখায় কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধ মূলক অসদাচারণের মাধ্যমে ৪৩৭টি নগদ লেনদেনের মাধ্যমে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০ আত্মসাৎ করেন ও ১৭টি অ্যাকাউন্ট স্থানন্তরের মাধ্যমে ১ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৬০০ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, আসামি সিলভিয়া আক্তার রিনি ৪৫৪টি ভাউচারই প্রস্তুত করে প্রস্তুতকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন এবং সফটওয়্যারে মেকার হিসাবে পোস্টিং দিয়েছেন। গ্রাহককে সঞ্চয়পত্র-কুপনের মূল্য পরিশোধের পর ওই সঞ্চয়পত্র কাস্টডিয়ান হিসেবে নিজের হেফাজতে রাখতেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র-কুপন ব্যবহার করে ভাউচার তৈরি করেছেন, শাখার কর্মকর্তাদের ভাউচারে ও কম্পিউটার সিস্টেমে অনুমোদন নিয়েছেন এবং ক্যাশ কাউন্টার থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। আসামি সিলভিয়া আক্তার রিনি ক্যাশ ডেবিট ভাউচারে গ্রাহকের স্বাক্ষর ভেরিফাই করলেও সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহকের স্বাক্ষরের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। তিনি ক্যাশ ডেবিট ভাউচার তৈরি করে প্রস্তুতকারী হিসেবে নিজেই স্বাক্ষর করেছেন।
অনুসন্ধান সূত্রে আরও জানা যায়, আসামি সিলভিয়া আক্তার রিনি এমসিকি দিলকুশা শাখায় সঞ্চয়পত্রের কাস্টডিয়ান ছিলেন এবং গ্রাহকের টাকা একবার প্রদানের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করার জন্য প্রদানকৃত সঞ্চয়পত্র-কুপন তার হেফাজতে রাখতেন। সুতরাং গুপ্ত সঞ্চয়পত্র-কুপন একাধিকবার ব্যবহার করা শুধুমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব ছিল।
দুদকের অসুন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডে আসামি সিলভিয়া আক্তার রিনি এবং তার ছেলে সাফি আজ জামান এর নামে পরিচালিত হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায় তার হিসাবটিতে ২৬ জানুয়ারি ২০১২ থেকে থেকে ৯ এপ্রিল ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২ হাজার ৩৬১টি লেনদেনের মাধ্যমে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৪০৩ টাকা জমা করেন। বর্তমানে ওই হিসাবের দুই হাজার ৬৫১টাকা রয়েছে।
ব্যাংক থেকে আত্মসাতকৃত অর্থ একাই ভোগ করেছেন এবং তার ওই হিসাবে লেনদেন করেছেন। আসামি সিলভিয়া আক্তার রিনি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৮ (আট) বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি এই হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেনে আয়ের/অর্থের উৎস্য সংক্রান্তে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
দুদকের অসুসন্ধান প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রেকর্ডপত্র ও সাক্ষ্য প্রমাণে এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়েছে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আসামি সিলভিয়া আক্তার রিনিই এককভাবে ওই ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫২০ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।
অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধ মূলক অসদাচারণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এই অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা এবং আত্মসাৎ করা ওই টাকা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের দায়ে দণ্ডবিধির ৪০৯/৫১১ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও (৩) ধারায় দুদক একটি মামলা দায়ের করেন।