আর্থিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় অবসায়নের প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং বন্ধ হচ্ছে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের প্রতিষ্ঠানটি ফের চালু করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। নতুন নামে এবং নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।
ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের জন্য বেশ কয়েকটি শিল্পগ্রুপ আলোচনা করেছে এবং করছে। বিভিন্ন শর্তে তাদের সঙ্গে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দর কষাকষিও চলছে।
পিপলস লিজিং পুনর্গঠনের জন্য ইতোমধ্যে ৪টি গ্রুপ দায়িত্ব নিতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে- শামসুল আলামিন গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আল-আমিন গ্রুপ ও বেক্সিমকো গ্রুপ।
তাদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ ও আলামিন গ্রুপে এগিয়ে রয়েছে। তবে বর্তমানে নাম পরিবর্তন ও নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে। বিশেষ একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।
বসুন্ধরা ও আলামিন গ্রুপ যৌথভাবে এটি পরিচালনা করতে চায়। তবে পিপলস লিজিংয়ে বিনিয়োগের বিষয়ে গ্রুপ দুটির কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে সম্প্রতি বলেন, পিপলস লিজিংয়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের চেয়ে বড় বিষয় আদালত কী রায় দেন। কারণ অবসায়নের বিষয়টি আদালতে প্রক্রিয়াধীন। পিপলস লিজিংয়ের যে অবজার্ভার নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তার কাছে আদালত প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা জানতে চেয়েছেন। এটি ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের পুঞ্জীভূত লোকসান ২ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ঘাটতি।
২৮৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির বিতরণকৃত ঋণের ৫২ শতাংশই খেলাপি। এ অবস্থায় ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে অবসায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
পিপলস লিজিংয়ে আমানতকারীদের ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করে কোম্পানিটিকে পথে বসিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার বা পিকে হালাদার।
এমডির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মাফিয়া ডন হয়ে উঠেছিলেন পিকে হালদার। তিনি পরোক্ষভাবে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে নানা কাজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেখানে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য কায়েম করেছিলেন।
২০১৫ থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকের মধ্যে তিনি প্রভাব খাটিয়ে পিপলস লিজিংসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
পিকে হালদার রিলায়েন্স ফিন্যান্সের এমডি থাকা অবস্থায় তার আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে আরো বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক বানান এবং একক কর্তৃত্বে অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির টাকা বিভিন্ন কৌশলে বের করে আত্মসাৎ করেন।