তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ সব শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারের কাছে অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের ক্ষেত্রে রেকর্ড ডেটের পরও একই সময়সীমা মানতে হবে। কোনো কারণে তিন বছরের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টন করা না গেলে তা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ জন্য 'ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড' নামে একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। অবণ্টিত ওই লভ্যাংশ এ তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। শিগগির এমন এক নীতিমালার আওতায় নির্দেশনা জারির প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে কমিশন। দীর্ঘদিন থেকে অবণ্টিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশেষ এ তহবিলের আওতায় এনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছে সংস্থাটি।
বিএসইসির নতুন এ নীতিমালায় তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী কোম্পানি কীভাবে লভ্যাংশ বিতরণ করবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা থাকবে। এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোকেও পৃথক নীতিমালা করতে হবে। লভ্যাংশ বিতরণ সংশ্নিষ্ট এ নীতিমালা সংশ্নিষ্ট কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির লভ্যাংশ বিতরণ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। কোম্পানিগুলোর দাবি, বিও অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভুল ও হালনাগাদ না থাকা কিংবা বিও ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নামে মিল না থাকার কারণে কিছু লভ্যাংশ বিতরণ হচ্ছে না। কারণ যাই হোক, হাজার হাজার বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। বছরের পর বছর অনেকের বিপুল অঙ্কের লভ্যাংশ অবণ্টিত অবস্থায় পড়ে থাকছে। আবার সেগুলো কোথায়, কীভাবে পড়ে থাকছে, সে বিষয়েও নজরদারি নেই। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে স্বচ্ছতা আনতে বিএসইসি প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কমিশনের নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে কোনো কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করতে না পারলে সে কারণ উল্লেখসহ অবণ্টিত লভ্যাংশের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। সংশ্নিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের নাম বা বিও অ্যাকাউন্টের ক্রম অনুযায়ী তালিকা বার্ষিক ও প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে হবে। অবণ্টিত লভ্যাংশের অর্থ ব্যাংকে জমা থাকার কারণে সেখান থেকে পাওয়া সুদের অর্থ ব্যাংকে 'অবণ্টিত লভ্যাংশ অ্যাকাউন্ট' নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে স্থানান্তর করতে হবে। অন্যদিকে একইভাবে অবণ্টিত শেয়ারও বিও অ্যাকাউন্ট খুলে সাময়িকভাবে স্থানান্তর করতে হবে।
নতুন নীতিমালায় কোনো শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডার অবণ্টিত মুনাফার দাবি জানালে দ্রুত তা স্থানান্তর করার ব্যবস্থাও থাকছে। একইভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এসব লভ্যাংশ বিএসইসির নির্দেশে কোনো তহবিলে হস্তান্তর করা হলেও সেটিও সংশ্নিষ্ট শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডাররা দাবির পরপরই ফেরত পাবেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশের ১০ দিনের মধ্যে নগদ লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে রাখতে হবে। এরপর বার্ষিক সাধারণ সভায় বা (অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের ক্ষেত্রে) পর্ষদে অনুমোদনের পর নগদ লভ্যাংশ বিইএফটিএন বা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত কোনো ইলেট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতি ব্যবহার করে শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। স্টক ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে শেয়ার জমা দিতে হবে বিও হিসাবে।
তবে কোনো শেয়ারহোল্ডারের বিও অ্যাকাউন্টের তথ্যে ব্যাংক হিসাব না থাকলে বা কেউ মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ পেলে তা সংশ্নিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যাংক হিসাবে একই উপায়ে স্থানান্তর করতে হবে। অন্যদিকে কোনো কারণে কোনো শেয়ারহোল্ডারের ব্যাংক হিসাবে ইলেট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের সুযোগ না থাকলে সেক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারদের নামে 'ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট' ইস্যু করা যাবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারী বা তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিদেশি উদ্যোক্তা বা পরিচালকের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে কাস্টডিয়ান ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে হবে। লভ্যাংশ পাঠানো সংক্রান্ত তথ্য সংশ্নিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। এ ছাড়া কোনো কারণে কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপক শেয়ারহোল্ডারদের স্টক ডিভিডেন্ড বা রাইট শেয়ার হস্তান্তর করতে না পারলে একটি সাময়িক 'সাসপেন্ড অ্যাকাউন্টে' তা স্থানান্তর করবে। এই বিও অ্যাকাউন্টটির শেয়ার অনুমোদন ছাড়া স্থানান্তরের জন্য ব্লক রাখতে হবে। এরপর সংশ্নিষ্ট শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারের ঠিকানায় অন্তত তিনবার নোটিশ পাঠাতে হবে।
তারা সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণে বলেন, ধারণা ছিল বেসরকারি ব্যাংকের বিস্তৃতি ঘটলে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত হবে। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কার্যত এখন দেখা গেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সিন্ডিকেটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এসব ব্যাংকেরও স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ।