নিয়ম থাকার পরও অনুমতি না নিয়ে কানাডা সফরে গিয়ে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান খসরু ‘দায়িত্ব পালনে অবহেলা’ করেছেন বলে মনে করছে দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘অবহেলা’ ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ‘বড় ধরনের অন্তরায়’, যা ‘মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়’।
গত মাসের শেষ দিকে এহসান খসরুকে চিঠি দিয়ে দায়িত্বে অবহেলা এবং অনুমোদন না নিয়ে বিদেশ সফরের বিষয়ে ব্যাখ্যা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক । ৭ জানুয়ারি মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়।
পদ্মা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৯ ডিসেম্বর এহসান খসরু কানাডা গেছেন। ১১ জানুয়ারি তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
৭ জানুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছে কিনা- সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি পদ্মা ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
গত বছরের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহীদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, ব্যাংক-কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যথাসম্ভব সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিছু ব্যাংক-কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজে কিংবা ব্যক্তিগত ছুটিতে দীর্ঘদিনের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাতে ব্যাংকের কাজের গতি কমার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান যতদূর সম্ভব পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
সেজন্য ব্যাংক থেকে সরবরাহ করা আবেদনপত্রের সাথে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের অনুলিপি, ভ্রমণের প্রস্তাবিত সময়, ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং দেশের বাইরে অবস্থানকালীন ঠিকানা ভ্রমণের ১৫ কর্মদিবস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন করলে এমডি বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুপস্থিতকালীন সময়ে তার জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবি, ফোন নম্বর ও ই- মেইল ঠিকানা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয় এবং ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে দিয়ে যেতে হবে ছুটিতে যাওয়া ব্যক্তিকে।
কিন্তু পদ্মা ব্যাংকের এমডি এহসান খসরু বিদেশে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেননি।
এই প্রোক্ষাপটে গত ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরে এহসান খসরুকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২৩ মার্চের ওই সার্কুলারের নির্দেশনা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে খসরুরই ব্যাংকের পর্ষদ সভায় জানানোর কথা ছিল, কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছুটি পর্ষদই অনুমোদন করে।
“এ বিষয়ে যথাসময়ে অবহিত থাকলে পর্ষদের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছুটি অনুমোদনকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনের শর্ত আরোপ করা সম্ভব হত। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্ষদকে অবহিত রাখা ব্যবস্থাপনা পরিচালকরে দায়িত্ব।
“কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে উক্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পরিপালিত না হওয়ায় পর্ষদ এ শর্ত আরোপ করতে পারেনি। অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনার অবহেলা ছিল, যা ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায়। এ ধরনের কার্যক্রম মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রাইম, ন্যাশনাল, প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে এমডির দায়িত্ব পালন করে আসা এহসান খসরু ২০১৮ সালের জানুয়ারি ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংকের দায়িত্ব নেন। পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর পরের বছর জানুয়ারিতে এ ব্যাংকের নাম হয় পদ্মা ব্যাংক।
এ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, যিনি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট পিএলসি এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান।