ঢাকা রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানির ১৮ কোটি টাকার হদিস নেই
  • ব্যাংকবীমিবডি.কম
  • ২০২০-১২-২৩ ০৫:১৫:৪৭

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে খোলা জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানি আইএনসিতে শুরু থেকেই গলদ ও অনিয়ম চলছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের এই এক্সচেঞ্জ কোম্পানি (যা জেইসিআই, ইউএসএ নামে পরিচিত) পরিচালনায় ভুল পথে হেঁটেছে ব্যাংকটি। যে কারণে এখন প্রতিষ্ঠানটির ১৮ কোটি টাকার হদিস মিলছে না। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা খরচ করেছে জনতা ব্যাংক। আবার দেশটির নিয়ম মেনে কার্যক্রম পরিচালনা না করায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা জরিমানাও গুনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এক্সচেঞ্জ হাউসটি নিয়ে বিপাকে রয়েছে জনতা ব্যাংক।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা এক বিশেষ প্রতিবেদনে অনিয়মের এমন তথ্য উঠে এসেছে। জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কাগজপত্র ঘেঁটেই তৈরি করা হয় প্রতিবেদনটি। সরেজমিনে পরিদর্শনে প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এক্সচেঞ্জ হাউসটির এই অবস্থার জন্য জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক—দুজনই হাউসটির পরিচালক।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর কার্যক্রম শুরু করে জেইসিআই, ইউএসএ। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের খরচ মেটাতে ৫০ হাজার ডলার এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ৫ লাখ ডলার নেওয়া হয়। এ ছাড়া স্থাপনা, সফটওয়্যার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচের জন্য নেওয়া হয় আরও ৩ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জন্য খরচ হয় সাড়ে ৮ লাখ ডলার বা ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা।

নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থিত এক্সচেঞ্জ হাউসে আহরিত অর্থ (কভার ফান্ড) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নস্ট্রো হিসাবে জমা করতে হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিদেশি কোনো ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় হিসাব খুললে তাকে নস্ট্রো হিসাব বলা হয়। এই হিসাবে টাকা জমা নিশ্চিত হওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীকে অর্থ দিতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনতা এক্সচেঞ্জের কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। এরপরও কার্যক্রম শুরুর আগেই জনতা ভবন করপোরেট শাখায় একটি হিসাব (সান্ড্রি এসেট) খোলা হয়, যা কোনো নীতিমালায় সমর্থন করে না। এই হিসাবে এক্সচেঞ্জ হাউসের অর্থ এসেছে এবং তা থেকে সুবিধাভোগীদের বিতরণ করা হয়েছে, তা–ও নীতিমালার লঙ্ঘন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সংগ্রহ করা প্রবাসী আয় দেশে এনে সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য নন–রেসিডেন্ট ডলার অ্যাকাউন্ট (এনআরডিএ) ও নন–রেসিডেন্ট কনভার্টেবল টাকা অ্যাকাউন্ট (এনআরটিএ) ছাড়া অন্য কোনো হিসাব খোলার সুযোগ নেই। এক্সচেঞ্জ হাউসের চাহিদা ছাড়া সান্ড্রি এসেট খোলার মাধ্যমে পুরো হাউসটির প্রবাসী আয় ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রেমিট্যান্সের হদিস নেই

বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউস পরিচালনার শর্ত হলো, কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্য খরচ আয় করে ব্যয় করতে হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করার জন্য দেশ থেকে টাকা নিতে পারবে। সে হিসাবে জনতা ব্যাংক ৭ কোটি টাকা ২২ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এর বাইরে প্রবাসীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা প্রবাসী আয় দেশে না পাঠিয়ে খরচ করেছে হাউসটি। এক্সচেঞ্জ হাউসটি ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৪ ডলারের প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে, যা বাংলাদেশের প্রায় ১০৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তবে দেশে কভার ফান্ড হিসেবে পাঠায় ১ কোটি ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮১ ডলার, যা বাংলাদেশের প্রায় ৮৯ কোটি টাকার সমান। ফলে বিদেশে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেও দেশে আসেনি প্রায় ১৮ কোটি টাকা।

এক্সচেঞ্জ হাউসটি খরচও বেশি করেছে। যেমন এটি উদ্বোধনের সময় খরচ করা হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা, পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিতির জন্য প্রত্যেক সদস্য নেন ৬৩ হাজার টাকা। আবার দেশটির ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসের নির্দেশনা না মানায় জরিমানা দিতে হয়েছে ১০ হাজার ডলার বা সাড়ে ৮ লাখ টাকা।

দায়ী কারা

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এক্সচেঞ্জ হাউসটিতে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ না দিয়ে অভ্যর্থনাকর্মী পদমর্যাদার চুক্তিভিত্তিক কর্মী সুস্মিতা তাবাসসুমকে দিয়ে পরিচালনা করা হয়েছে। এ জন্য জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি দায়ী। সুস্মিতা তাবাসসুম ৫ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জমা না দিয়ে জাল নথি তৈরির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। সুস্মিতা ছাড়াও হাউসটির সাবেক প্রধান নির্বাহী নজরুল ইসলামকেও অর্থ অপচয়ের জন্য দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মূলত সেখানকার একজন কর্মী টাকা সরিয়েছেন। নিউইয়র্কে এ নিয়ে মামলা হয়েছে, আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টা দেখছেন।’

ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে
ইউনিয়ন ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ আট কর্মকর্তাকে দুদকে তলব
কিছু ব্যাংকের বাঁচার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’, ডিজিটাল ব্যাংক এখনই নয়: গভর্নর