ঢাকা শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
বছর শেষ ব্যাংকের মুনাফা হিসাব করতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকাররা
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২০-১২-১৯ ২২:১৬:৩১

বছরের শেষ সময়ে এসে ব্যাংকের মুনাফা হিসাব করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকাররা। গতানুগতিক মুনাফা হিসাবের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপকরা এ তথ্য দিয়েছেন।

জানা গেছে, সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব চূড়ান্ত করা হয় ডিসেম্বর মাসে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শেষ ১৫ দিনে ব্যাংকাররা সারা বছরের আয়ের হিসাব চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত থাকেন। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ, সুদ স্থগিত রাখার পর মুনাফা আলাদা করা হয়। প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা আগেই বেঁধে দেয়া হয়। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে অনেক সময় খেলাপি ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আলাদা হিসাবে না রেখে মুনাফা দেখানো হয়। আবার খেলাপি ঋণ কম করে প্রভিশন কম দেখিয়ে বাড়তি মুনাফা দেখানো হয়। শাখা প্রধানরা ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপকদের কাছে মুনাফার যে তথ্য দেন তাই হিসাবে আনা হয়। এভাবে একটি ব্যাংকের সকল শাখার হিসাব সমন্বয় করে মুনাফা চূড়ান্ত করা হয়। এভাবে পরিচালন মুনাফা দেখিয়ে থাকেন ব্যাংকাররা।

কিন্তু এবার মুনাফার এ হিসাব করতে পারছেন না ব্যাংকাররা। করোনার কারণে গত এক বছর ধরে ঋণ শ্রেণীকরণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শিথিলতা আরোপ করা হয়। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও ওই গ্রাহককে ঋণখেলাপি করা যাবে না। এ কারণে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ ছিল চলতি ডিসেম্বর শেষে তা থেকে বাড়ছে না, বরং কমে যাচ্ছে। এক বছর ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণখেলাপি করতে না পারায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ইতোমধ্যে কমে গেছে। খেলাপি ঋণ না বাড়ায় প্রভিশনও কম দেখাতে হবে। এতে ঋণ আদায় না করেও ব্যাংকের মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে।

কৃত্রিম এ মুনাফা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ শ্রেণীকরণ না হলে ওই ঋণ থেকে অর্জিত মুনাফা ব্যাংকগুলোর আয় খাতে নিতে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ একটি ঋণ যতক্ষণ পর্যন্ত খেলাপি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাংক ওই ঋণ থেকে অর্জিত সুদ আয় খাতে নিতে পারবে। আর কোনো ঋণখেলাপি হলে ওই ঋণ থেকে অর্জিত সুদ ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারে না। এটি আলাদা হিসাবে স্থগিত রাখা হয়। গত এক বছর যাবত ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা আরোপ করায় বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণই আদায় হয়নি। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ঋণখেলাপিও করা যায়নি। ফলে কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলো অনায়াসে ঋণ আদায় না হলেও বিদ্যমান ঋণ থেকে অর্জিত সুদ আয় খাতে নিতে পারবে। কৃত্রিম আয় থেকে সরকারের ৪০ শতাংশ কর পরিশোধ করার পর মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করা হলে ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা কমে যাবে।

কৃত্রিম এ মুনাফা ঠেকাতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর জন্য জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিবহন ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিনিয়োগ থেকে মুনাফা আয় খাতে নিতে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। আগে ৩১ ডিসেম্বরে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক যে মুনাফা হিসাব করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতেন সেটাই চূড়ান্ত মুনাফা হিসেবে ধরে নেয়া হতো। কিন্তু গত এক বছর ঋণ আদায় না হওয়ায় কেউ যাতে কৃত্রিমভাবে আয় বাড়িয়ে দেখাতে না পারেন সে জন্য ১০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগের সুদ আয় খাতে নিতে হলে ব্যাংকের অডিট কমিটিসহ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। আবার পাঁচ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকার নিচ পর্যন্ত বিনিয়োগ থেকে সুদ আয় খাতে নিতে হলে শাখা প্রধানের সুপারিশসহ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আর পাঁচ কোটি টাকার নিচে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা আয় খাতে নিতে হলে শাখা প্রধানের সুপারিশসহ তার নিয়ন্ত্রণকারীর কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। অপর দিকে প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয় ঋণ বা বিনিয়োগের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনের বিধান অনুযায়ী আবশ্যিক প্রভিশন হিসাব করে যথারীতি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।

এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকাররা বিশেষ করে শাখা ব্যবস্থাপকরা ইচ্ছে করলেই মুনাফার হিসাব চূড়ান্ত করতে পারছে না। মুনাফা চূড়ান্ত করার আগে পর্ষদসহ অডিট কমিটির অনুমোদন নিতে হচ্ছে। ফলে চলতি বছর শেষে ব্যাংকগুলোর মুনাফার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

সাউথইস্ট ব্যাংকে গ্রাহকের মতবিনিময় সভা
ব্যাংকগুলো শাখা খোলার পরিবর্তে ডিজিটাল মাধ্যমকে গুরুত্ব দিচ্ছে
আইএফআইসি ব্যাংক থেকে গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা ছিনতাই, ২ পুলিশ গ্রেপ্তার