ঢাকা মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
পুনর্গঠন করা ঋণ আর পুনঃতপশিল নয়
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২২-০১-২০ ২০:৪২:৪৩

পুনর্গঠন করা ঋণ পুনঃতপশিলের আবেদন আবারও নাকচ করল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকে পাঁচশ কোটি টাকার বেশি ঋণ থাকা গ্রাহকরা ২০১৬ সালে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে ঋণ পুনর্গঠন করেন। পুনর্গঠনের পরই কয়েকটি গ্রুপ খেলাপি হওয়ায় ২০১৭ সালে একবার তাদের ঋণ পুনঃতপশিলের আবেদন করা হয়। তখনও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্ষদ এ আবেদনে সাড়া দেয়নি। সম্প্রতি করোনার প্রভাবের কথা বলে আবার আবেদন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে গতকাল পরিচালনা পর্ষদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্য পরিচালক ও সংশ্নিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পুনর্গঠিত ঋণ পুনঃতপশিলের আবেদন গ্রহণ না করার পাশাপাশি সিআইবিতে ঋণের তথ্য গোপন করায় ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা মওকুফে ন্যাশনাল ব্যাংকের আবেদন নাকচ করা হয়। এ ছাড়া পিপলস ব্যাংকের সম্মতিপত্রের মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৫ সালের ঋণ পুনর্গঠনের সার্কুলার করা হয় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে। ওই নির্দেশনার অন্যতম একটি শর্ত ছিল- পুনর্গঠন করা ঋণ আর পুনঃতপশিল করা যাবে না। এ বিষয়ে গতকালের বৈঠকে একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

 

২০১৪ সালের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে একটি নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার আলোকে ২০১৬ সালে ১১টি গ্রুপের ১৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ঋণ ১২ বছরের জন্য পুনর্গঠন করা হয়। সুবিধা পাওয়া গ্রুপের তালিকায় ছিল অ্যাননটেক্স, এসএ গ্রুপ, বিআর স্পিনিং, থার্মেক্স, রতনপুর, রাইজিং স্টিল, সিকদার, বেক্সিমকো, যমুনা, আব্দুল মোনেম ও কেয়া গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব গ্রুপের ঋণে সুদহার কমানো, পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি, সুদ মওকুফ ডাউনপেমেন্টের শর্ত শিথিলসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধের আগে নতুন করে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা দেওয়া হয়। গ্রেস পিরিয়ড শেষে কিস্তি পরিশোধের সময় আসতেই ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ২০ বছরের জন্য পুনঃতপশিল সুবিধা চেয়ে যৌথ আবেদন করে এসএ গ্রুপ, রতনপুর গ্রুপ ও এম আর গ্রুপ। তাদের ঋণে নতুন করে কোনো সুদ আরোপ না করে শুধু বিদ্যমান ঋণ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ চাওয়া হয়। গ্রেস পিরিয়ডের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়। বিভিন্ন পর্যালোচনা শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে, পুনর্গঠিত ঋণ আর পুনঃতপশিল করা যাবে না। সুবিধা নেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠান সময়মতো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সব ধরনের সুবিধা বাতিল হবে। এ ছাড়া টানা দুটি কিস্তি খেলাপি হলে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সমুদয় অর্থ আদায়ে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক দেউলিয়া আইনে মামলা করতে পারবে। সুবিধা পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠান বেশ আগেই খেলাপি হলেও দেউলিয়া আইনে মামলা করার খবর পাওয়া যায়নি।

ন্যাশনাল ব্যাংকের জরিমানা মওকুফের আবেদন নাকচ :বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের ১১টি ক্রেডিট কার্ডে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা পাচার করে সিকদার পরিবার। এসব কার্ডে ঋণের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে গোপন করা হয়। যে কারণে সম্প্রতি প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে পাঁচ লাখ করে মোট ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জরিমানা মওকুফের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবেদন এসেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ব্যাংকটির আবেদন গতকালের পর্ষদ সভায় উত্থাপন করলে তা নাকচ হয়। দ্রুততম সময়ে ব্যাংকটি জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে রক্ষিত হিসাব থেকে তা কেটে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে ন্যাশনাল ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে নানা জালিয়াতির তথ্য উঠে আসে। সাধারণভাবে ভ্রমণ কোটায় দেশের বাইরে বছরে ১২ হাজার ডলার খরচ করার সুযোগ রয়েছে। তবে সিকদার পরিবারের ৯ সদস্য ও সিকদার গ্রুপের দুই কর্মকর্তার নামে ইস্যু করা কার্ডের বিপরীতে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল সময়ে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত এক কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার ৫২৯ ডলার খরচ করা হয়। অতিরিক্ত খরচ করেছেন প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের ছেলে ও ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার। জয়নুল হকের আরও তিন সন্তান দিপু হক সিকদার, মমতাজুল হক ও লিসা ফাতেমা হক, রিক হক সিকদারের দুই ছেলে জন হক সিকদার, শোন হক সিকদারসহ এ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের নাম রয়েছে এ তালিকায়। এ ছাড়া সিকদার গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সৈয়দ কামরুল ইসলাম ও গ্রুপের কর্মকর্তা ভারভারা জারিনাও সীমার বেশি খরচ করেছেন

ঋণ খেলাপির মেয়াদ ৩ মাস করা হচ্ছে
পুনঃতফসিল করা ঋণ: আদায় ছাড়া সুদ আয় দেখানো যাবে না
মূলধনও হারিয়েছে ১০ ব্যাংক