বছরের শেষ সময়ে এসে ব্যাংক খাতে যেন নতুন শাখা খোলার হিড়িক পড়েছে। এমনও হচ্ছে, এক দিনেই একাধিক শাখা খুলছে কোনো কোনো ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছর শাখা খোলার নির্ধারিত লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে শেষ সময়ে শাখা খোলার ধুম লেগে যায়। তবে করোনা ও উপশাখার ধারণা আসার পর ব্যাংকগুলো শাখা খোলা কমিয়ে দিয়েছে। এরপরও যে লক্ষ্য থাকে, তা শেষ সময়ে এসে পূরণ করে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে সাধারণত ডিসেম্বরেই শাখা খোলার হিড়িক পড়ে। প্রতিবছর ব্যাংকগুলো মোট ৩০০ থেকে ৩৫০টি নতুন শাখা চালু করে। এর মধ্যে এক শর বেশি শাখা খোলা হয় শুধু ডিসেম্বর মাসে। যেমন করোনা শুরুর বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলো মোট ১২৪টি নতুন শাখা চালু করেছিল। আগের বছর ২০১৯ সালের একই মাসে নতুন শাখা খোলা হয়েছিল ১১১টি। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খোলা হয়েছিল ৭৪টি শাখা। এবারেও ডিসেম্বরে এসে প্রচুর শাখা খুলছে ব্যাংকগুলো।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা ছিল ১০ হাজার ৭৫২টি, যা গত জুনে বেড়ে হয় ১০ হাজার ৭৯৩টি। আর সেপ্টেম্বর শেষে শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮০৮টি। চলতি মাস শেষে তা ১০ হাজার ৯০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে এখন প্রতি চারটি নতুন শাখার মধ্যে শহরে তিনটি ও গ্রামে একটি খুলতে হয়।
গত জুন পর্যন্ত শাখা সংখ্যায় শীর্ষে ছিল সোনালী ব্যাংক। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শাখা থাকার ফলে ব্যাংকটির শাখা আগে থেকেই বেশি, যা গত জুন শেষে বেড়ে হয় ১ হাজার ২২৬টি। সোনালীর পেছনেই রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। এই ব্যাংকেরও গ্রামগঞ্জে শাখা বেশি। গত জুনে বিকেবির শাখার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮টি। একই সময়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯৬০টি শাখা ছিল অগ্রণী ব্যাংকের। এগিয়ে থাকা অন্যদের মধ্যে জনতা ব্যাংকের ৯১৩টি, রূপালী ব্যাংকের ৫৮৩টি, পূবালী ব্যাংকের ৪৮২টি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ৩৮৩টি শাখা ছিল।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত জুন শেষে সর্বোচ্চ ৩৭৪টি ছিল ইসলামী ব্যাংকের। একই সময়ে উত্তরা ব্যাংকের ২৪১টি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২১৩টি, ডাচ্–বাংলার ২১০টি, ইউসিবিএলের ২০৪টি, আল-আরাফাহ ইসলামীর ১৯১টি, ফার্স্ট সিকিউরিটির ১৯০টি, সোশ্যাল ইসলামীর ১৬৮টি ও ব্র্যাক ব্যাংকের ১৬৭টি শাখা ছিল। অন্য ব্যাংকগুলোর শাখা এর চেয়ে কম।
বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অনেক ব্যাংক সেবা বাড়ানোর জন্য শাখা খুলছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক লোকবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে নতুন শাখা চালু করছে। নতুন শাখা খোলার মাধ্যমে কোনো কোনো ব্যাংকের মালিকেরা নিজ নিজ এলাকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। এ ধরনের নিয়োগের কারণে ব্যাংকিং সেবা মান হারাচ্ছে।
জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যাংকের শাখা খোলার খুব প্রয়োজন ছিল। তবে নতুন শাখা খুলে মুনাফায় আসা বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়। এখন ব্যাংক সেবার জন্য নানা মাধ্যম এসেছে। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখনো শাখা খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। সিটি ব্যাংকও নতুন কোনো শাখা খুলছে না। তবে বিকল্প মাধ্যমে সারা দেশে সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে আরও কয়েক গুণ বাড়বে।
মাসরুর আরেফিন আরও বলেন, এখনো অনেক ব্যাংক শাখা কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। এ জন্য বছরের শেষ সময়ে এসে শাখা খোলা বেড়েছে।
এদিকে ব্যাংকগুলো উপশাখা খোলার দিকে নজর দিয়েছে। খরচ কম হওয়ায় এবং কম জনবল দিয়ে পূর্ণ শাখার মতো কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ থাকায় বেশির ভাগ ব্যাংক নতুন নতুন উপশাখা খুলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক খাতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মোট উপশাখা ছিল ১ হাজার ১৪৭টি, যা চলতি বছরের জুন শেষে বেড়ে ১ হাজার ৬৭২টিতে উঠেছে।