বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ডাউন হয়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়ে অর্ধেকে নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকতে না পারায় অনেক ব্যবসায়ী নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারেনি। একইভাবে খালাস নিতে পারেনি আমদানি পণ্য।
চট্টগ্রামের কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেডের ১ লাখ ৩৬ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ডাউন থাকায় প্রতিষ্ঠানটির এক্সপোর্ট ফরম ইস্যু করতে পারেনি ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। যে কারণে গত বৃহস্পতিবার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট জাহাজ ধরতে পারেনি। এখন আমদানিকারক (ক্রেতা) প্রতিষ্ঠান এ্যালোরা এবং বিজেডি এর সাথে আলোচনা চলছে পরের কোন শিপমেন্টে পোশাকগুলো পৌঁছতে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে করোনার আগে প্রতিদিন গড়ে আমদানি-রপ্তানির ৭০০০-৮০০০ বিল অব এন্ট্রি দাখিল হতো। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর থেকে আমদানি-রপ্তানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বিল অব এন্ট্রি দাখিলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০০০ থেকে ৯৫০০ পযর্ন্ত পৌঁছে। যেমন গত ২৪ নভেম্বর ১৬৬৫টি আমদানি এবং ৭৬৩৮টি রপ্তানি মিলে মোট বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ৯৩০৩টি। পরের দিন ২৫ নভেম্বর ব্যাংকের সার্ভার ডাউন হওয়ার পর থেকে প্রভাব পড়তে শুরু করে। ওইদিন ২৫ নভেম্বর ২৫৩৮টি আমদানি এবং ৪৭১২টি রপ্তানি মিলে মোট বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয় ৭২৫০টি।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ২৬ নভেম্বর থেকে। ওইদিন কোন আমদানি পণ্যের বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি। রপ্তানি পণ্যের বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে মাত্র ৪৪৪৬টি।
পরের দিন ২৭ নভেম্বর মাত্র ৭৬টি আমদানি পণ্য ও ৪১৮১টি রপ্তানি মিলে মোট ৪২৫৭ বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়। ২৮ নভেম্বর ২৩৮০টি আমদানি ও মাত্র ১৬৩৯টি মিলে মোট ৪০১৯টি বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়। সেই হিসেবে, ২৭ ও ২৮ নভেম্বর আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত (২৯ নভেম্বর) আমদানি-রপ্তানির ডাটা পাওয়া না গেলেও বিল অব এন্ট্রি অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কাট্টলী টেক্সটাইলের কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ডাউন থাকায় আমরা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য শিপমেন্ট করতে পারিনি। এখন আমরা ক্রেতার সাথে আলোচনা করছি পরবর্তী সময়ে পোশাকগুলো পৌঁছাতে।
এন এস ড্রেসেস লিমিটেডের কমার্শিয়াল এক্সিকিউটিভ গোলাম রাব্বানি বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের প্রতিষ্ঠানেরও এক্সপোর্ট ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ত্রুটির কারণে আমরা বৃহস্পতিবার ও শনিবারে কাজ করতে পারিনি। পরে রোববার সন্ধ্যার দিকে সার্ভার কিছুটা সচল হলে আমরা এক্সপোর্ট ফরম ইস্যু করে পণ্য এক্সপোর্ট করতে সক্ষম হই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার বৈদেশি বিনিয়োগ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ডাউন হয়ে আছে। এর মধ্যে রোববার সবচেয়ে ধীরগতি ছিল সার্ভারের। এমনকি গতকাল সোমবারেও সার্ভার সমস্যা সমাধান হয় নি। এতে এক্সপোর্ট ফরম ইস্যু করতে না পারায় বহু প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।
এমএম ইস্পাহানী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান পাহাড়তলী টেক্সটাইল। গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির কারখানার আমদানিকৃত কাঁচামাল বন্দর থেকে ছাড় পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ত্রুটির কারণে পণ্যগুলো ডেলিভারি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রামে আরেক প্রতিষ্ঠান লয়্যাল এ্যাপারেলস। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি পোশাক রোববার শিপমেন্ট হওয়ার কথা থাকলেও এক্সপোর্ট ফরম ইস্যু করতে না পারায় তা হয় নি।
বিজিএমইএ এর পরিচালক রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, সার্ভার ত্রুটির কারণে আমাদেরও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে আমরা আগের মতো ম্যানুয়ালি এক্সপোর্ট ফরম পূরণ করে কোনভাবে কাজ শেষ করেছি। অনেক ব্যাংকই ম্যানুয়ালি এক্সপোর্ট ফরম ইস্যু করে রপ্তানি কাজ শেষ করেছে।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শুনেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার ডাউন থাকায় বহু ব্যাংকে আমদানি-রপ্তানি কাজ ব্যহত হচ্ছে। যদি তা হয় বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সার্ভারের মেইনটেনেন্সের কাজ করলে বিষয়টি আগে থেকে জানিয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতো।
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে এলসি করতে সমস্যা হচ্ছে এবং বিল অব এন্ট্রি ওভার ডিউ চেকিং করাসহ বহু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।