ঢাকা শনিবার, জুন ১৪, ২০২৫
ব্যাংকিং নীতি শিথিলে তৈরি হয়েছে দুর্নীতির সুযোগ
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২০-১২-১৩ ২১:৩৯:৪৫
ছবি : সংগৃহীত

ফেসবুক পোস্টে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি তার ফেসবুকে ব্যাংক খাত সংস্কার কমিটি নিয়ে এক মন্তব্যে বলেছেন, ইদানীং ব্যাংকিং খাতে নিয়মনীতি শিথিল করার ফলে আরও মারাত্মক ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয় এক সময় কিছুদূর অগ্রসর হয়ে আমরা যেন আবার পেছনের দিকে হাঁটছি।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি ব্যাংক সংস্কার কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ১৯৯৯ সালে সেই কমিটি ব্যাংকিং খাতে সুনির্দিষ্ট সংস্কারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। তার কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।

সম্প্রতি তার এক সাবেক ছাত্র ব্যাংক সংস্কার কমিটির প্রতিবেদনের প্রচ্ছদের একটি ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। সেটি দেখে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত আমার এক সাবেক ছাত্র এ ছবিটি তুলে আমাকে পাঠিয়ে বলেছে রিপোর্টটি ব্যাংকের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে এবং সে এটি পড়ে খুব উপকৃত হয়েছে, কারণ তার মতে ব্যাংক খাত সংস্কারের সব নির্দেশনাই এতে আছে।’

তবে আমার মতে, এ রিপোর্টের কিছু বিষয় যুগোপযোগী করা দরকার। যেমন বাজার অর্থনীতিতে শেয়ার কিনে একটি ব্যাংকের মালিকানা দখল করার সুযোগ থাকে, কিন্তু এ সুযোগের অপব্যবহার করে এ খাতে একচেটিয়া দখলদারিত্ব তৈরি হওয়া যে বিপজ্জনক এবং তার প্রতিকারের কিছু নিয়মনীতি থাকা যে দরকার তা এ রিপোর্টে নেই। অলাভজনক খেলাপি প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য দেউলিয়া আইনের সুযোগ দেয়ার ব্যাপারেও তেমনটা বলা হয়নি। বড় অঙ্কের জালিয়াতি ও বিদেশে পাচারের অর্থ ব্যাংকিং খাতের মধ্য দিয়ে কি করে হাত বদল হয় তা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমের বিষয়ও তখন আলোচনায় আসেনি। তার চেয়ে বড় কথা হল এত আয়োজন ও পরিশ্রম করে তৈরি সংস্কারের রিপোর্ট তো লাইব্রেরিতে সেলফবন্দি হয়ে থেকে লাভ নেই যদি বাস্তবায়ন না হয়।

এ রিপোর্টের বেশকিছু সুপারিশ এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রবিধি হিসেবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, কিন্তু পরে ব্যাংকিং আইনে রূপান্তরিত করা হয়নি বলে সেগুলো আর কার্যকর থাকেনি। বরং ব্যাংকিং আইনে বিধি-নিষেধগুলো আরও শিথিল করার ফলে অনিয়মের সুযোগ আরও বেড়ে গেছে।

মনে আছে, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এ সংস্কার কমিটির কাজ শুরু করার সময় ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের মিটিংয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনারা তো ব্যক্তি খাতে ব্যাংকিং ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন মুনাফা পেতে, ব্যাংক ভালো চললে তো আপনাদেরই লাভ। উত্তরে সংগঠনের সভাপতি যা বললেন তার সারাংশ দাঁড়ায়- বোকার ভান করবেন না, মূলধন ছাড়াও অনেক বাড়তি খরচ করে ব্যাংক দিয়েছি; এখন নিজেদের জন্য সেই ব্যাংকের আমানতের অন্তত কিছু অংশ নিয়ে নেব না তা কি হয়? সে সময় বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের ৩ ভাগের ১ ভাগই ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নেয়া ঋণ, যার অধিকাংশই ছিল খেলাপি।

পরে ব্যাংক সংস্কারের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ ও উচ্চ আদালতের সক্রিয়তার কারণে অন্তত ৫৪ উদ্যোক্তা-পরিচালককে অপসারণ করা হয় নিজেদের ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে, এছাড়া আরও ৭৩ জন তাদের নেয়া ঋণ নিয়মিত করতে বাধ্য হন, আর ৮ জন তখন আদালতের স্থগিতাদেশ নিতে সক্ষম হন। এরপর থেকে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এ ধরনের ঋণ নেয়ার সংস্কৃতির অবসান হয়; দেখা গেল যে আইনত যে পরিমাণ ঋণ তারা নিতে পারেন, তাও নিচ্ছেন না।’

ব্যাংক আলফালাহ কিনে নিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া, সমঝোতা স্মারক সই
কাইজার এ চৌধুরী এবি ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান
ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে